আরও একবার – সপ্তদশ পর্ব

by Tamali

“সবু এখন এতগুলো টাকা খরচ করবি! কী জন্যে দিল্লি যাবি তাও বলছিস না।কোনো ইন্টারভিউ এলো না কী সেটা তো বল”,উৎসবের মা ছেলের হঠাৎ করে তৎকালে টিকিট কেটে দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত মানতে পারেনা।কাল টিকিট কেটে আজকেই বেরিয়ে যাবে! কোথায় যাচ্ছে,কেন যাচ্ছে,কেউ সঙ্গে যাচ্ছে কি না…কিছুই বলতে চাইছে না ছেলে।
মায়ের কথার জবাব না দিয়ে ব্যস্ত ভাবে নিজের ট্রলি গোছাতে থাকে উৎসব।মানির দেওয়া সমস্ত উপহারগুলো নিতে হবে।ওগুলোই ওর সম্পর্ক বাঁচিয়ে তোলার জিয়নকাঠি।ভীষণ বড় ভুল করে ফেলেছে ও জীবনে,এই মুহূর্তে না শুধরে নিলে সারাজীবন পস্তাতে হবে।নিজের ইগোয় অন্ধ না হয়ে তখন যদি একবার হিসেব করে দেখতো কত বড় ক্ষতি করছে ও নিজের আর নিজের কেরিয়ারের!
ওর কেরিয়ারে কিছু ইনভেস্টমেন্ট দরকার,সেই টাকা টুকু ওর নেই।কিন্তু এখন যার টাকার অভাব নেই তাকে ওকে মানাতেই হবে।
“মা তুমি একটু বাইরে যাও তো।আমার কিছু ইম্পরট্যান্ট প্যাকিং আছে”,মায়ের সামনে জিনিস গুলো বের করতে চায়না ও।এমনিও দিল্লি শুনে কিছু একটা সন্দেহ করে ওর পিছনে পরে আছে মহিলা সেই সকাল থেকে।একে আর কোনোভাবে নিজের জীবনে ইন্টারফেয়ার করতে দিলে হবেনা।একবার ভুল করেছে শুধু এর প্ররোচনায়,আর না।
বাঁকা চোখে ছেলেকে দেখে ওর ঘর থেকে বেরিয়ে যায় উৎসবের মা,সঙ্গে সঙ্গে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় উৎসব।তারপর গিয়ে নিজের আলমারি খুলে একে একে নামাতে থাকে জিনিসগুলো।ও জানে পরের দিকের উপহার গুলোর সাথে ওর নিজের কোনো আবেগ জড়িয়ে না থাকলেও মানিনী প্রতিটা উপহারের সাথে মিশিয়ে দিত ভালোবাসা।নিজের টিউশনির টাকা জমিয়ে কেনা জিনিস গুলোয় অনেকটাই মায়া মিশিয়ে দিত ও উৎসবের জন্যে।এই সেন্টিমেন্ট গুলোই উৎসবের শেষ ভরসা।
সবশেষে ও ভরে নেয় মানির জন্যে কেনা ওর এবারের বিশেষ উপহার।একটা সোনার গিল্টি করা রুপোর আংটি।আপাতত ওর সামর্থ্যমত কিনেছে ও।
মনে মনে নিজেকে পুরোপুরি গুছিয়ে তবেই ট্রেনে উঠবে উৎসব।এই পাঁচ বছরে মানিনীর যা যা দুর্বলতার সাথে পরিচয় হয়েছে ওর,সব গুলো কাজে লাগিয়ে শেষ একটা চেষ্টা ওকে করতেই হবে।এইভাবে সোনার ডিম পাড়া মুরগিকে ও ছেড়ে দিতে পারবে না মিথ্যে অভিমানকে প্রশয় দিয়ে।একটা আত্মবিশ্বাসের হাসি ফুটে ওঠে উৎসবের ঠোঁটে।

“বোস”,নিজেদের ড্রয়িং স্পেসে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড সোফা কাম বেড কিনেছে অয়ন আর সৌরভ দুজনে মিলে মাস তিনেক হলো।সেখানেই বসতে জায়গা করে দিলো অয়ন।ফাঁকা ফ্ল্যাটে নিজের বেডরুমে যাওয়ার কথা বলতে নিজেরই অস্বস্তি হলো ওর।
“একটু ঠান্ডা জল খাওয়াবে প্লিজ?” সোফাতে বসতে বসতে বলে মানি।
“শিওর।বোস আনছি।বাই দ্য ওয়ে প্লেইন জল না কোল্ড ড্রিংকস?” অয়ন যেতে গিয়েও ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে।
-“না জল ই ঠিক আছে।তবে ঠান্ডা।ফ্রিজ আছে তো তোমাদের?”
-“হ্যাঁ ম্যাডাম।এনসিআর এ গরমে ফ্রিজ ছাড়া সারভাইভ করা সম্ভব না”।
-“সারভাইভ করা যায়,তবে কষ্টকর”।
অয়ন হেসে ঘাড় নেড়ে পাশের ঘরে চলে যায়,ফিরে আসে একটা জলের বোতল নিয়ে।ওদের ডাইনিং স্পেসে এসি আছে,রাতে খুব গরম করলে দুই বন্ধু এসে এখানে শুয়ে পড়ে।
অয়নের আনা বোতলের জল বেশ খানিকটা গলায় ঢেলে মানি হাসে,”জানো অয়ন বাবা দেখলে বকতো।আমার ফ্যারিনজাইটিস আছে।ফ্রিজের জল খাওয়া বারণ,কিন্তু আমি লুকিয়ে লুকিয়ে খাই,আর বাবা দেখলেই…”,কথা শেষ করতে পারেনা ও।তার আগেই ছোঁ মেরে ওর কাছ থেকে জলের বোতলটা কেড়ে নেয় অয়ন।
“তুমি কী!! জেনে শুনে নিজের ক্ষতি করে আবার আমায় বলছো? বাবা বকে মানে কী? এত বড় মেয়েকে বাবাকে বকে সামলাতে হবে,কোথায় তুমি বাবাকে সামলাবে।তা না।একদম ঠান্ডা জল খাবে না”,অয়নের গলার স্বর হঠাৎ শুনে চমকে যায় মানি।তারপর জোরেই হেসে ফেলে।
“তুমি হাসছো? এত রাগ হচ্ছে আমার।আর কোনোদিন ঠান্ডা খেয়ে দেখো আমার সামনে,দেখবে কী করি?”
অয়নের কথার প্রত্যুত্তরে মানি হাসতে হাসতে বলে,”কী করবে আমায় বকবে না মারবে?”
“ভীষণ বকুনি খাবে।আমার মা’ও তোমার মত।একা হাতে আমায় মানুষ করেছে,এমনিতে কত বাস্তববাদী।কিন্তু অম্বলের রুগী দুধ চা পেলেই খাবে আর তারপর অ্যাসিডিটিতে কষ্ট পাবে।রীতিমত বকাবকি করতে হয় এখনো।শেষবারও তো ওই দু তিনদিন ঘন দুধের চা খেয়ে এমন বাড়াবাড়ি হলো,ছুটতে হলো আমায়…ছাড়ো ওসব,বলো তুমি কী বলবে বলছিলে”,আর কৌতুহল সামলে রাখতে পারেনা ও।
মুখের হাসিটা সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে যায় মানিনীর,বদলে এক বিষাদের হালকা ছায়া যেন মুখে এসে পড়ে।নিজেকে একটু গুছিয়ে নেয় ও।কেন অয়নকে কথাগুলো বলছে দ্বিতীয়বার না ভেবে নিজেকে হালকা করতে শুরু করে উৎসবের কথা।সেই কলেজ বেলার দিন,ওর নিজের সম্পর্কে আসার পর পাগলামো উৎসবের জন্যে,তারপর ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকা গল্পটা ছোট করে বলেই দেয় অয়নকে।
যখন মানিনী থামে অয়নের ফ্ল্যাটের বসার ঘরে তখন অপার নীরবতা,এমনকি দুপুরের নিস্তব্ধ সোসাইটিতে এই নীরবতা বড্ড বেশি যেন কানে লাগে।
মানিনী মুখ তুলে তাকায় অয়নের দিকে,সেই দৃষ্টিতে একটু নড়ে বসে অয়ন।
“আমার সম্পর্কের বয়সও হয়েছিল তোমার মতোই।কিন্তু সম্পর্কটা নিজে বড্ড বুড়ো হয়ে গেছিল।আবেগ অনুভূতি উচ্ছ্বাস কিছুই আর বাকি ছিল কী না জানিনা,তবে বড্ড একঘেয়ে হয়ে গিয়েছিল শেষ দিকে।কথা শেষ হতো একটাই পয়েন্টে গিয়ে,সেটা বিয়ে।তবে তার আগেই নিশ্চই আমার বন্ধু মোমের মনে জায়গা করে নিয়েছিল।নাহলে আমি যখন শেষ অবধি বিয়েতেও রাজি হলাম ও বেরিয়ে গেল কেন?” যেন নিজেকেই এত মাস পর প্রশ্ন করে অয়ন,সেই সুরে কথা গুলো বললো।
“মোম?”,মানি জানতো অয়নের গার্লফ্রেন্ডের নাম মৌমিতা।
হেসে ফেলে অয়ন,”অনেকদিন পর মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেল।শুধু সৌরভ জানে মৌমিতা কে আমি মোম বলতাম,বাকিরা মৌ বললেও মোম নামটা আমার খুব প্রিয় ছিল”।
অয়নের মুখে এতদিন পর ওর গার্লফ্রেন্ড এর কথা শুনে মানির কেন কে জানে একটা অদ্ভুত চাপা কষ্ট হয়।একেই উৎসবের কথা এতক্ষন ধরে বলে মন ভারী ছিল,তারওপর অয়নের সম্পর্কের কথায় মনের মধ্যে অকারণ যেন রক্তক্ষরণ শুরু হয়।মুখে কিছু না বলে চুপচাপ বসে থাকে ও।
“মানি তুমি আমায় আজ সব কিছু এত বিশ্বাস করে কেন বললে জানিনা।তবে আমি বন্ধু হিসেবে এটাই বলতে পারি সময়ের সাথে মানুষের প্রায়োরিটি যেমন বদলায়,তেমন বদলায় পছন্দের সংজ্ঞা।যে অধিকারবোধ একটা সময় আমাদের আনন্দ দিত, কিছুদিন পর সেটাই বোঝা লাগে।আমি নিজের কথা এই কারণেই বললাম যে ডাকটা আমি শখ করে ডাকতাম,শেষের দিকে সেটাই বড় কানে লাগতো।বোঝা মনে হত।উৎসব থেকে গেলে ওর সবকিছু এতোটাও তোমার বিরক্ত লাগতো না,কারণ ও তোমার অভ্যেস হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু একটা ব্রেক তোমায় তোমার প্রায়োরিটি বুঝিয়ে দিয়েছে,তাই উৎসবের পজেসিভনেস তোমার কাছে এখন বোঝা হয়ে গেছে”,অয়ন কথা শেষ করতেই মানি মুখ খোলে।
“না পজেসিভনেস না,ও একচুয়ালি ডমিনেট করে।সম্পর্কে অল্পবিস্তর অধিকারবোধ ভালো।কিন্তু একজন বলবে খালি,অন্যজন শুনেই যাবে এটা কে কত বড় ভুল আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি।শুনতে শুনতে তার অস্তিত্বই মিলিয়ে যায়।সে যে আলাদা একজন মানুষ,তার ইচ্ছে অনিচ্ছে, পছন্দ অপছন্দ সব গুরুত্বহীন হয়ে যায়।উৎসব আমাকে দুর্বল মানুষে পরিণত করে দিয়েছিল,আমি শুধু ওকে আটকে রাখার জন্যে সব কিছু করতাম।কিন্তু ওর থেকে সরে আসার পর অভ্যেস থেকে দূরে থেকে আমি প্রথম প্রথম কষ্ট পেলেও পরে দেখলাম অনেক মানসিক শান্তিতে আছি। আর উৎসবের বদলে ওই মানসিক শান্তিটাই আমার প্রিয় হয়ে গেল।আসলে সব মানুষের সবার আগে নিজেকে ভালো রাখতে পারাটা খুব দরকার,তবে সে বাকিদের ভালো রাখতে পারে।আমি এটা বুঝেছি উৎসব ছাড়া আমি ভালো থাকি,আর সেটা আমার খুব প্রিয় হয়ে গেছে।ও ফিরে আসার পর আমি যদি ভালো না থাকি,এটাই আমায় ওর থেকে দূরে রাখছে।আমি চাইছি না ও ফিরে আসুক আমার জীবনে।”
হাঁ করে অয়ন তাকিয়ে থাকে মানির মুখের দিকে।কত সহজে এত কঠিন ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলো মেয়েটা।সত্যি তো দিনের পর দিন নিজের পছন্দ বাদ দিয়ে,অন্যের পছন্দে মাথা নেড়ে সত্যি কি সুখী হওয়া যায়! দুর্বলতা,হারানোর ভয় নিজের ইচ্ছার গলা টিপে ধরলেও হাসি মুখে সেটা মানিয়ে নিতে হয় অপর পক্ষ কে।এই মানিয়ে নেওয়া দুপক্ষেই সমান ভাবে হলে তবেই না সম্পর্ক সুন্দর হয়,একে অপরের থেকে দূরে গেলেও একে অপরের প্রতি টান বাড়ে।
“বুঝলাম। কিন্তু তুমি এখন কী চাইছো? সরাসরি বলো,নাহলে এরকম মানসিক টানাপোড়েন নিয়ে নিজের কাজও তো মন দিয়ে করতে পারবে না।আমি নিজে যেদিন বুঝেছিলাম আমাদের সম্পর্কে আর বিশেষ কিছু বেঁচে নেই,মৌমিতার চাহিদা গুলো পূরণের অন্য কেউ এসে গেছে।সরে এসেছিলাম সেখান থেকে।তোমার মত আমারও প্রথম প্রথম কষ্ট হত।তারপর যখন বুঝলাম ভালো আছি সত্যি খুব হালকা লেগেছিল নিজেকে।তোমার অনুভব সত্যি একশো পার্সেন্ট ঠিক।নিজে ভালো থাকা সবার আগে দরকার।আর হ্যাঁ তুমি না চাইলে কেউ কখনো জোর করে সম্পর্ক তৈরি করতে পারেনা,বা পুরোনো সম্পর্ক জোড়া লাগাতেও পারেনা।তাই প্লিজ এত চাপ নিওনা।জাস্ট ইগনোর করো”,অয়ন নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে পড়ে,”গরমকালেও এই দুপুরের শেষটা আমার চা খেতে বেশ লাগে।আদা দিয়ে লিকার চা,তুমি খাবে?”
“এই গরমে আদা চা!” মানিনী অবাক হয়ে বলে,বুঝতে পারেনা ওর গলার সমস্যা যাতে না হয় অয়ন তাই ওকে চা খাওয়াতে চাইছে।”আচ্ছা অল্প করে দাও”।

“তুমি কী বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা।তুমি এখন আমার অফিসের সামনে আমার জন্যে অপেক্ষা করছো!! এর মানে কী উৎসব? প্লিজ বলো…”,মানিনীর গলা না চাইতেও চড়ে যায়।
অয়ন সিঙ্কে চায়ের কাপ গুলো রাখবে বলে উঠে দাঁড়ায়,আসলে পালাতে চায় মানির সামনে থেকে।উৎসবের ফোন আসলে ও যে ইনসিকিওর হয়ে যায় ওর মুখের অভিব্যক্তিতে যাতে ফুটে না ওঠে তাই…।
কিন্তু উৎসব দিল্লি এসেছে!মানিকে মানাতে!
অদ্ভুত এক মন খারাপ করা ঝড় যেন অয়নের বুক জুড়ে বইতে থাকে।
“হ্যাঁ মানি আমি পারবোনা তোমায় ছেড়ে থাকতে।আমি ভুল ছিলাম।কিন্তু একটা সুযোগ তো সবাই পায় বলো? আমি একটাই মাত্র সুযোগ …”,উৎসবের কথা পুরোটা শোনার ধৈর্য্য হয়না মানির।
“প্লিজ প্লিজ প্লিজ উৎসব বিশ্বাস করো আমি আর পারছিনা।তোমার এই নিজের ইচ্ছা আর সেই মতো হুটহাট ডিসিশন নেওয়া,আমি জাস্ট আর পারছিনা।বিশ্বাস করো ভালোবাসা যেমন একদিনে শুরু হয়না,তেমন একদিনে শেষও হয়না।কিন্তু তোমার তরফ থেকে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে আমি ভেঙে গিয়েছিলাম।তোমায় কেন যে বোঝাতে পারছিনা, ইটস ওভার!প্লিজ মুক্তি দাও আমায়,আমি জানি…”,এবার উৎসব থামায় মানিনী কে।
“প্লিজ মানি আমায় একবার সুযোগ দাও।কথাগুলো শোনো আমার…”।
“উৎসব তুমি এটাই বুঝতে পারছো না ভালোবাসা থাকলে তবে সুযোগ এর কথা আসে। আই হ্যাভ নো ফিলিংস ফর য়্যূ।আজ থেকে ছমাস আগে যখন আমি তোমায় ফোন করি,শেষ চেষ্টা করতে,তখনও আমার মনে হত তোমায় ছাড়া আমার জীবন…জাস্ট ইম্পসিবল। প্রথম প্রথম রাতে ঠিক ওই নির্দিষ্ট সময় ঘুম ভেঙে যেত।কিন্তু তারপর অনেক মানসিক লড়াই করে ওই ফেজটা কাটিয়ে আসার পর যখন বুঝলাম আগের চেয়ে বেশি ভালো আছি।নিজের সেলফ রেসপেক্ট একটা আলাদা শান্তি দিচ্ছে সেই দিন নিজের জীবন থেকে তোমায় মাইনাস করে দিয়েছিলাম।এখন আর কোনোভাবেই তোমার সাথে জীবন জোড়া সম্ভব না।এটা প্লিজ বোঝ”।
“কিন্তু মানি আমি তোমার সাথে দেখা করতে শুধু দিল্লি এসেছি।প্লিজ…”,উৎসব সত্যি ভাবেনি মানিনী মনের দিক দিয়ে এখানে পৌঁছেছে,ওর গলায় ভেঙে পড়ার আওয়াজ প্রকাশ পায়।
“ঠিক আছে উৎসব,একবার দেখা করতে অসুবিধে নেই।কিন্তু প্লিজ তুমি কোনোভাবে পুরোনো সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলবে না”,মানিনীর গলার দৃঢ়তা অয়ন উপলব্ধি করে কিচেন থেকে।
উৎসবের সাথে দুদিন পর দেখা করার দিন ঠিক করে মানিনী যখন ফোন কাটে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে বোঝা যায় ওর হাবেভাবে।
ডাইনিং রুমের ডিভানে বসে হাঁটুতে কনুই ভর দিয়ে মাথা গুঁজে দেয় দুহাতের মধ্যে।
কিচেনের মধ্যে থেকে ফোন কল শেষ হয়েছে বুঝতে পারে অয়ন।ডাইনিং রুমে এসে মানিনী কে ওভাবে বসে থাকতে দেখে এই প্রথম প্রচন্ড রাগ হয় উৎসবের ওপর।পায়েপায়ে মানির কাছে এসে ওর পাশে বসে ও।
একটু ভেবে ওর কাঁধে আলতো হাত রাখতেই মানি হঠাৎ করে অয়নকে আঁকড়ে ধরে।
নিজের মানসিক যন্ত্রনা,অনিশ্চয়তা আজ অনেকদিন পর মানিকে অসহায়ের মত কাঁদতে বাধ্য করছিল। ও জানে উৎসব কী রকম নাছোড়বান্দা ছেলে। প্রচন্ড অসহায় লাগছিলো ওর নিজেকে।পুরোনো সম্পর্কের খারাপ দিক এত বেশি ছিল,কোনো কিছুর বিনিময়ে সেই খানে ফিরতে ও চাইছে না আজ,এটাই ও বোঝাতে পারছে না উৎসবকে। কিন্তু ওকে পারতেই হবে,ছেলেটা জীবনে থেকেও জীবন দুর্বিষহ করে দিত,যাওয়ার সময়ও কাঁদিয়েছে আর আজ জোর করে হঠাৎ ফেরার চেষ্টা করেও কাঁদাচ্ছে।এই দূর প্রবাসে মাতৃহীন মানিনীর অয়নের আলিঙ্গনে নিজেকে কিছুটা নিশ্চিন্ত লাগলো।কিছু বোঝার বা ভাবার সময় না পেয়ে একটু শান্তি দিতে অয়নও আলতো করে জড়িয়ে নেয় মানিকে।

ক্রমশ..

You may also like

Leave a Comment

error: Content is protected !!