মুখোশের আড়ালে -চতুর্থ পর্ব

by Tamali

চতুর্থ পর্ব:-


“শুভ,কি হয়েছে তোর এসে সেই ঘরের দরজা দিয়েছিস।খোলার নাম নেই।চা খাবিনা?আজ তোর প্রিয় পকোড়া বানিয়েছি।কিরে শুনতে পাচ্ছিস?”দরজার বাইরে মায়ের চিৎকারটা বড্ড কানে লাগছে।মাথাটা সেই যে ধরেছে,কিছুতেই কমছেনা।শিরা গুলো যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে।এসে থেকে ঘুমোনোর চেষ্টা করেও ঘুম এলোনা,চোখ বন্ধ করলেই ওই দৃশ্যটা ভেসে উঠছে,ওই প্রায়ান্ধকার ঘরে ওদের ঘনিষ্ট হওয়ার ছবিটা।’কেন যে ওদের দেখে উঠে গেলাম’,শুভ খালি একই কথা ভাবছে।আচ্ছা আজকাল ভালোবাসা মানেই কি সব কিছু এত তাড়াতাড়ি!এখনকার জেনেরশন হয়তো প্রেম বলতে আগে শরীরই বোঝে,কিন্তু কতটা মরিয়া ওরা,নাহলে কলেজের ক্লাসরুমে….ছি ছি! এই মেয়েটাকে ও ওর প্রতিবিম্ব ভেবেছিল!যদি আজ ওর বদলে অন্য কোনো সিনিয়ার প্রফেসর থাকতেন,ওদের ওভাবে দেখে অপমান জনক কিছু বলতেন…সবচেয়ে বড় কথা, লোক জানাজানিও তো হতে পারতো!কোনো কিছু ভাবেনা এরা,আর লজ্জাও নেই এসব ছেলে মেয়েদের।কিন্তু….. একটা খটকা….দৃশ্যটা নজরে আসতেই ও যখন প্রায় নিঃশব্দে চলে আসছিল সৌরভের উত্তেজিত কণ্ঠস্বর কানে এসেছিল,আর সেই স্বরে বিরক্তি মিশে ছিল।আর কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা চলেও গেছিল।তাহলে কি?….না না,মেয়েটার প্রশয় না থাকলে কোনো ছেলের পক্ষে এতটা এগোনো সম্ভব না।কিন্তু ও কেন এসব ভেবে নিজের সময় নষ্ট করছে।এসব মেয়েদের কথা ভাবাও সময় অপচয়।না আর ভাববেনা।সামনে পুজো,মাকে নিয়ে অনেক ঘুরবে।মা অনেক্ষন অপেক্ষা করছে,কি ভাবছে কে জানে!না যাওয়া উচিত এবার মার কাছে।-“কি খেতে দেবে দাও মা,সত্যি খুব খিদে পেয়েছে।একটা দরকারি পেপার দেখতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল,আর মাথাটাও খুব ধরেছে দুপুর থেকে।তোমার হাতের চা না খেলে ছাড়বেনা।” নিজেকে স্বাভাবিক করতে জোর করেই শুভঙ্কর মার কাছে গিয়ে বসল।-“আয়, তোর প্রিয় পকোড়া বানিয়েছি আজ,খা।চা দিচ্ছি।”শুভর মা শুভ্রা দেবী শুভর ব্যবহারে বুঝলেন ছেলে কোনো কারণে আজ বিধ্বস্ত আছে।তিনি তাঁর ছেলেকে হাতের তালুর মতো জানেন।ছোট থেকেই মন খারাপ হলে মার কাছে এসে বসে বা শুয়ে থাকতো।কলেজে একটা মেয়েকে ভালো লেগেছিল একবার,কিন্তু সে যখন অপমান করে বাড়ি ফিরে তাঁর কাছে  এসেই কোলে মুখ রেখে চুপ করে শুয়েছিল।       তাঁর ছেলে খুব চাপা,তিনি খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করলেও সব সময় সব কিছু বলতে চায়না।-“তোর কলেজের কি খবর রে?আজকাল তো মা কে কলেজের কথা কিছুই বলিসনা”,একটু থেমে আবার বললেন,”ওই পর্ণা নামের মেয়েটির মা কেমন আছেন রে?কিছু জানিস”।পর্ণার নামে শুভর মুখের চেহারা হটাৎ বদলে গেল।বিরক্তিপূর্ণ গলায় বলল,”ওতো স্টুডেন্টদের কার কে অসুস্থ সেসব জিজ্ঞেস করার সময় আমার নেই।তুমি তো জানো,কারোর ব্যক্তিগত ব্যাপারে আমি কোনোদিনই ঢুকিনা।তবে বেশ কিছুদিন কলেজে আসেনি ওর মায়ের অসুখের জন্যে,এর বেশি কিছু জানিনা।”শুভ্রা দেবী আর ওবিষয় কথা বাড়ালেন না,তবে যেটুকু বোঝার বুঝে নিলেন।যে ছেলে কলেজের বাইরে কোথাও কোনো স্টুডেন্ট যেচে কথা বলতে এলেও এড়িয়ে যান,সে সেদিন ডক্টরের চেম্বারে আগ বাড়িয়ে একটা মেয়েকে ডেকে প্রশ্ন করাতে তিনি একটু অবাকই হয়েছিলেন,তারপর ছেলের মুখ থেকে যেটুকু শুনেছিলেন তাতে বিস্ময় বেড়েছিল বই কমেনি…মেয়েটার ব্যাপারে অনেক বেশি খবরই ছিল ছেলের কাছে।কিন্তু ছেলের বলার বাইরে বেশি আগ্রহ দেখিয়ে নিজে কিছু জানতে চাননি।আজ বুঝলেন,শুভ কোনো কারণে মেয়েটির ওপর বিরক্ত হয়েছে,আর সেটাই হয়তো তার মানসিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে।-“শুভ একটা কথা রাখবি?”-“কি বলো?”-“কাল আমার সাথে এক জায়গায় যাবি?”-“কোথায় বলো?তুমি বলেছ আর আমি কথা রাখিনি এমন কি কোনোদিন হয়েছে মা?”-“তোর রত্না পিসি একটা সম্বন্ধ এনেছে,ওর কোন বান্ধবীর মেয়ের জন্যে।খুব জোর করছে কাল একবার যেতে।আমি তাই কাল যাবো।তুই যাবি?তুই সাথে গেলে একসাথে দেখে তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে পারবো।”অনেক কিন্তু কিন্তু করে বলেই ফেললেন।-“মা তোমার রত্না পিসির কথা কি কিছু মনে নেই?বাবা কত ভালোবাসতো নিজের পিসতুতো বোনটিকে।কিন্তু সেই দাদার অসুখের খবর শোনার পর কোনো যোগাযোগই রাখেনি কতবছর।এদের কেন তুমি প্রশয় দিচ্ছো বলতো?”একই কথা বলতে বলতে বিরক্ত হয় শুভ।-“মেয়েদের বড় জ্বালা রে।নিজের মত বলে কিছু থাকেনা।সেই সময় সদ্য বিয়ে হওয়া তোর ওই পিসিকে তার স্বামী-শাশুড়ি তোর বাবার সাথে যোগাযোগ রাখতে দেয়নি।ওর কিছু করার ছিলোনা রে।তবে সংসার ওর হাতে আসার পর পরই তো ও আবার আমার সাথে যোগাযোগ করে।কতবার যে দুঃখ প্রকাশ করেছে,তুইও তো জানিস।….আর বাবা ভুলে যা খারাপ সময়ের কথা।যত মনে রাখবি কষ্ট পাবি,একা হয়ে যাবি।তার চেয়ে সবাইকে নিয়ে থাকাই ভালো।”শুভ্রা দেবী আরো একবার নিজের ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন।-“কি করে ভুলে যাবো মা তোমার বেশিরভাগ রাতে জল খেয়ে শুয়ে পড়ার দিনগুলো!?কি করে ভুলবো বাবার সহকর্মীরা না থাকলে আমার পড়াশোনাটাও হতোনা?কিকরে ভুলবো আমি মেডিকেলে চান্স পেয়েও পড়তে পারিনি?কি করে ভুলবো এইসব আত্মীয়রাই তাদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে আমাদের ব্রাত্য করে দিয়েছিল?আরো আরো আরো অনেক কষ্ট লড়াই সেগুলো কি ভোলা যায় মা?তুমি বলোনা?”শুভর কথার উত্তর কি বলবেন ভেবে পেলেন না শুভ্রা দেবী।ও যা বলছে ভুল কিছু তো বলেনি,কিন্তু এত বছর কাছের লোকের অভাব ওনাকে এতটাই পীড়া দিয়েছে যে এখন তাদের সাহচর্য হারাতে কিছুতেই মন চায়না।লড়াই এর দিনগুলো সারাদিন কোথা দিয়ে সময় কেটে যেত বুঝতেই পারতেন না।কিন্তু এখন… ছেলে তাকে কিছুই করতে দেয়না।রান্নাটা জোর করেই করেন,তাও একটা মেয়ে সমস্ত জোগাড় করে দিয়ে যায়।ফোনে কাছের লোকেদের সাথে দু চার কথা বললে তাও সময়টা কাটে।শুভর ভয় কাউকে বাড়ি আসতে বলেনননা বিশেষ।কয়েকজন সমবয়সী বৃদ্ধার সাথে বিকেলে পার্কে একটু বেড়ান -গল্প করেন,আর ওই ফোন আর টিভি,এই তো তার সঙ্গী। ছেলেটাকে বলে বলেও বিয়ে করছেনা।অদ্ভুত ভয়,যদি ওর বউ মাকে কষ্ট দেয়।আরে বাবা ভাগ্যে থাকলে কষ্ট দেবে,তাই বলে কি ছেলেটা নিজের জীবনটা নষ্ট করবে নাকি? শুভ্রা দেবীকে চুপ করে থাকতে দেখে শুভঙ্করের খারাপ লাগে,আসলে এই আত্মীয় গুলোর কথা শুনলেই ঐদিনগুলো মনে পড়ে যায় খুব বেশি।কিন্তু মায়ের মুখে হাসি না দেখলে ওর কিছু ভালো লাগেনা,”ঠিক আছে যাবো তোমার সাথে।কিন্তু একটা শর্ত,মেয়ের সাথে আলাপ করে ভালো না লাগলে কিন্তু মুখের ওপর বলে আসব।তোমার ঐ ‘রমা পিসির চেনা’ এসব বলতে পারবেনা।আর অপছন্দ হওয়ার চান্সই কিন্তু বেশি”,নিজের কথা বলে আর একটা কথাও মাকে বলার সুযোগ না দিয়ে টেবল ছেড়ে নিজের ঘরে চলে যায় শুভ।শুভ্রা দেবী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এঁটো কাপ দুটো নিয়ে বেসিনে রাখতে উঠে যান।কত যন্ত্রনা পেয়ে তার সেই শান্ত ছেলেটা যে আজ এত কঠিন হয়ে গেছে তার থেকে ভালো কেউ জানেনা।কিন্তু তিনি ভুলতে চান সবকিছু।অপেক্ষা করেন হয়তো কোন জাদু স্পর্শে তার ছেলেটাও আবার বাইরের কঠিন খোলস ছেড়ে স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।জানলা দিয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে ফিরে যান ভুলে থাকতে চাওয়া দিনগুলোরও আগের ভালো দিনে,হারিয়ে যান স্মৃতির গলিতে।

কলেজ থেকে ফিরে থেকে মেয়েটা চুপচাপ হয়ে আছে,সকালে কত আনন্দ করে সেজেগুজে কলেজ গেল,কিন্তু ফিরল থমথমে মুখ নিয়ে।বলেছিল,’বাবা এসে গেছো তো,তাহলে আমার চিন্তা নেই,শান্তিতে কলেজ করতে পারবো। আমার ফিরতে বিকেল হবে’,কিন্তু দুপুরে চলে এসে সেই যে ঘরে ঢুকেছে আর বেরোয়নি। পায়েল ,পর্ণার মা,নিজের মনে ভেবেই চলেছেন।যে মেয়ে ৫মিনিট চুপ থাকেনা,সে হটাৎ এত চুপচাপ থাকলে অস্বস্তি লাগে বৈকি।     পর্ণা ভেবেছিল বাড়িতে ফিরলে মনটা শান্ত হবে,কিন্তু মা বাবার সামনে যেতে কেমন অস্বস্তি হচ্ছে।মনে হচ্ছে ওদের ধোঁকা দিচ্ছে যেন।এতদিন অবধি কোনকিছু মা কে লুকোয়নি,কিন্তু সৌরভ এর কথা বলেনি ইচ্ছা করে।ভেবেছিল একদম সব একসাথে বলবে,সৌরভের সাথে ওদের আলাপ করানোর আগে।কিন্তু ভাবেনি এত বড় ভুল হয়ে যাচ্ছে।এর মধ্যে একবার সুশী ফোন করেছিল,ধরেনি।সৌরভ ওর মেসেজের রিপ্লাই দেয়নি কিছু,কিন্তু অপমানে লেগেছে সেটা পর্ণা বুঝেছে।সেই সকালে খেয়ে বেরিয়েছে,খিদেও পাচ্ছে,কিন্তু মা’র সামনে যেতেই ইচ্ছা করছেনা।প্রথম প্রেম অসম্পূর্ণ থেকে যাবে বলে ওর যতটা না কষ্ট হচ্ছে,তার থেকেও বেশি খারাপ লাগছে কেউ ওর অমতে ওকে ছুঁলো বলে।না ও অতটাও আধুনিক নয় যে এসব আবেগ গুলো এতটা সস্তা ওর কাছে,ওর কল্পনা বিলাসী মনের কাছে এই আবেগগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।সব হয়তো ‘পিকচার পারফেক্ট’ হয়না জীবনে,কিন্তু অনুভূতিশীল মনের কাছে সেগুলোই অনেকটা ক্ষত রেখে যায়।প্রথম চুম্বন প্রথম ভালোবাসার মতোই আবেগপ্রবণ হয়।হয়তো সৌরভ এর ক্ষেত্রে ভালোলাগাটা নেহাতই ‘ক্রাশ’ ছিল,একে অপরকে ভালো করে চেনাটাই তো হয়ে ওঠেনি,কিন্তু আজকের ওর ব্যবহার কোনোভাবেই পর্ণার কল্পনার পুরুষের সাথে মেলেনা।ও এমনিতে খুবই বাস্তববাদী, তাই প্রেমটা কেঁচে গেলে কষ্ট পেলেও সেই নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পরার মেয়ে ও নয়,এটুকু ও অনুভব করেছে এটা আর যাইহোক প্রেম ছিলোনা।কিন্তু ওই ছোঁয়াটা ওর মনে একটা কষ্ট তৈরি করেছিল।একটা সময় সব খারাপ লাগা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নীচে ডাইনিং রুমে এসে মা কে বলল,”খেতে দাও।…তোমার শরীর এখন কেমন?রাতের রান্না আমিই করবো।..আমায় খেতে দিয়ে একটু বিশ্রাম নাও গিয়ে।” পায়েল রাতের খাবারই বানাচ্ছিলেন।পর্ণাকে চা জলখাবার দিয়ে ওর পাশে এসে বসলেন।ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,”কি হয়েছে তোর?কলেজে কিছু হয়েছে?”পর্ণা অবাক হয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকালো,’কি করে বুঝলো মা,সে তো কোনো কিছু বলেনি বা কান্নাকাটিও করেনি’। পায়েল মেয়ের মনের কথা বুঝতে পেরে বললো,”তোকে মানুষ করবো বলে স্কুলে পাওয়া চাকরি নিইনি।কোনোদিন যাতে ভাই,বোন, বন্ধুর অভাব অনুভব না করিস ছায়ার মতো লেগে থেকেছি তোর সাথে।তোকে চেঁচাতে, ঝগড়া করতে,মান অভিমান করতে দেখেছি,কিন্তু কাঁদতে বা ডিপ্রেসেড হতে দেখেনি।এটা আমার গর্ব যে আমার মেয়ে ‘ছিঁচকাঁদুনে’ না।কলেজ যাওয়ার আগে অবধি কোনোদিন কিছু লুকোসনি আমায়,কিন্তু কলেজে যাওয়ার পর বুঝলাম তোর একটা নিজস্ব জগৎ হয়েছে।জানতে চাইনি,কারণ বিশ্বাস ছিল তোর ওপর।জানতাম কোনো বলার মতো কথা থাকলে ঠিক বলবি।খোঁচাইনি তোকে একটাই কারণে তুই একই ছিলি, বদলাসনি।কিন্তু আজ তোকে জীবনে প্রথমবার অন্যরকম দেখলাম।কি হয়েছে আমায় বলতে পারিস কিন্তু”। মায়ের কথা শুনতে শুনতে নিচের অনুভূতিকে গোপন করতে পারা মেয়েটার চোখ জলে ভরে গেছিল।আজকাল যে কি হচ্ছে,জলটা তাড়াতাড়ি চলে আসছে।এস.এস স্যার এর ক্লাসে সেইদিন প্রথম বেইমানি করেছিল,আজ আবার।কিন্তু তাতেও রক্ষা হলোনা,মায়ের কথা শেষ হতে না হতে ঝরে পড়লো দুগাল বেয়ে।চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে মা কে জড়িয়ে ধরলো।বাবা দূরে সোফায় বসে কাগজ পড়ছিলেন,সব খেয়াল করলেও উঠে এলেননা।উনি জানেন পায়েল ওর থেকেও ভালোভাবে ব্যাপারটা সামলাতে পারবেন।কানটা সজাগ রেখে চোখের সামনে খবরের কাগজটা ধরে থাকলেন আগের মতোই। পায়েল মেয়েকে সামলানোর সময় দিলেন,পিঠে মাথায় আলতো করে হাত বোলাতে লাগলেন শুধু।কিছুক্ষন পর পর্ণা শান্ত হয়ে নিজের চেয়ারে বসলো।তারপর মুখ নিচু করে আস্তে আস্তে নিচু স্বরে মা কে সব কথা বললো।জানেনা মা কি ভাবলো,কিন্তু ও নিজে অনুভব করলো যেন কয়েক মন বোঝা নেমে গেল বুক থেকে।হালকা লাগলো নিজেকে।পায়েল সবটা শুনলেন,সৌরভ বলে ছেলেটার ওপর রাগে মাথার শিরা দপদপ করতে লাগলো,কিন্তু শান্ত গলায় মেয়েকে বললেন,”কিন্তু তোর মন খারাপ কেন?ভাবছিস কেন সৌরভ সব সম্পর্ক শেষ করে দেবে!হয়তো ওর খারাপ লেগেছে,কিন্তু পরে ও ওর ভুলটা বুঝতে পারলে হয়তো যোগাযোগ করবে।” এই কথা শুনে পর্ণা জোরে জোরে মাথা নেড়ে বললো,”না,না,না।ওই ছেলে কি করবে আমি জানিনা,কিন্তু আজ আমি এটুকু বুঝেছি ওর সূক্ষ্ম অনুভূতি বলে কিছু নেই।আর যাই হোক সৌরভকে আমি ভালোবাসতে পারবোনা।সৌরভের প্রতি যেটা ছিল হয়তো ‘মোহ’,কিন্তু ভালোবাসা….না না না মা।প্লিজ ও একটা জোর করে কিস করেছে বলে এই সম্পর্কটা আমায় কন্টিনিউ করতে বলোনা।”ভাঙা গলায় শেষের কথাগুলো ও বলে ফেললো। পায়েল সঙ্গে সঙ্গে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলল,”তোর মা বাবা কে এই চিনলি তুই?আমি শুধু তোর মনটা পড়তে চাইছিলাম।তুই কবে এত বড় হয়ে গেল বুঝতেই পারলামনা।তুই ছোট থেকে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি বুঝদার জানি,কিন্তু নিজের আবেগ অনুভূতির ওপরে গিয়ে মানুষ চিনতে শিখেছিস এটা ভাবিনি।তুই আমাদের গর্ব।তুই কেন মন খারাপ করছিস?একটা কুকুর কামড়ে দিলে কি মানুষ নিজেকে দোষ দেয়?ও তোর দুর্বলতার সুযোগ নিতে চেয়েছিল,তুই যে সেটা বাধা দিয়েছিস এটাই কত বড় ব্যাপার।ভুলে যা এসব বাজে ঘটনা।”আবার থেমে বললেন,”অন্য মা বাবার মতো আমরা বলবনা এটা কাউকে বলিসনা,দরকারে নিশ্চই বলবি,যাতে আর কেউ ওর ফাঁদে না পড়ে।কিন্তু নিজে এটা নিয়ে আর কখন ভাববিনা।আর তোর ভবিষ্যৎ ?যদি কেউ সত্যি তোকে ভালোবাসে এসব তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে মাথাও ঘামাবেনা।তুই নিজের পায় দাঁড়াবি এটাই আমাদের আশা, বিয়ে সংসার সেসব তো রইলো।……কথা দে এসব কথা নিয়ে মন খারাপ কোনোদিন ও করবিনা”। পর্ণা মা কে জড়িয়ে ধরলো।’উফফ কি শান্তি’।এতক্ষন পর ওর বাবাও উঠে এসে ওর মাথায় হাত রাখলেন।দুজনে মিলে জড়িয়ে ধরলেন মেয়েকে।

ক্রমশ…

You may also like

Leave a Comment

error: Content is protected !!