তৃতীয় পর্ব:-
মেয়েটা বেশ কিছুদিন হলো কলেজ আসছেনা,সেদিন ডক্টরের চেম্বারে অতো কঠিন স্বরে কথা বলা ঠিক হয়নি,ওর মা’র অবস্থা ঠিক কতটা সিরিয়াস না জেনে আজ ক্লাসে মন্তব্য করাটাও বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে।ঠিক ওর কানে যাবে।আসলে মেয়েটার চোখ,ওই চোখ গুলো একসাথে কতরকম কথা বলে।বাংলা বিষয় টাকে কতটা ভালোবাসলে তবেই সায়েন্স ছেড়ে,সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ ছেড়ে বাংলায় অনার্স নেয়ার কথা ভাবে কেউ সেটা শুভর থেকে ভালো আর কেউ জানেনা।মাঝে মাঝে ওকে পুরো নিজের প্রতিবিম্ব মনেহয়।পার্থক্য একটাই ও নিজে মেডিকেলে চান্স পেয়েও মা’র মুখ চেয়ে বাংলা পড়তে আসে,কারণ বাংলা বিষয়টাকেও খুব ভালোবাসতো,রীতিমতো চর্চা করতো, আর মেয়েটা অন্য কোনো বিষয়কে গুরুত্বই দেয়নি।সায়েন্সে উচ্চমাধ্যমিকে স্টার মার্ক্স পেয়েও বাংলা অনার্স নিয়েছে শুধু মনের টানে।শুভ সব খবর নিয়েছিল ওকে প্রথম দিন ক্লাসে অপমানজনক কথা বলার পর।ওই জলভরা চোখগুলো বাংলা নেওয়ার কারণ হিসেবে ওকে যেন অনেক কিছু বলতে চেয়েছিল ,কিন্তু আত্মসম্মানী মন তা বলতে দেয়নি।একটাই সমস্যা মেয়েটা বড্ড চঞ্চল প্রকৃতির।আর ও যে ছেলেটার সাথে সম্পর্কে আছে সেই ছেলেটাও…..”শুভ,শুভ…খাবি আয়।” শুভঙ্করের চিন্তায় ছেদ পরে ওর মায়ের ডাকে।”আসছি” বলে রাতের খাবারের জন্য উঠে পড়ে ত্রিশ পেরোনো যুবকটি।ভাড়া বাড়ি ছেড়ে বছর দুই হলো কর্মক্ষেত্রের কাছাকাছি এই দু কামরার ফ্ল্যাটটা কিনেছে।কৈশোরে পা দিয়েই বাবাকে হারানো ছেলেটার তার মা কে ঘিরেই দুনিয়া।শিক্ষক বাবার সামান্য পুঁজি নিয়ে মা যখন জীবন সংগ্রাম শুরু করে কোনো আত্মীয়ই পাশে ছিলোনা।বাবা সুস্থ থাকতে বাবার পরামর্শ নিতে ভিড় জমাতো যে সব নিকটজনেরা বাবার কর্কট রোগ ধরা পড়তেই রাতারাতি তারা অদৃশ্য হয়ে যায়।শুভর সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা থাকায় বাবা বহুদিন অবধি রোগের কষ্ট চেপে রেখেছিলেন,মা কে অবধি জানতে দেননি।যে স্টেজে রোগটা ধরা পড়েছিল হয়তো চিকিৎসা করিয়েও লাভ কিছু হতোনা,তাও শুভর মা আজও আক্ষেপ করেন।শুভর বাবা চেয়েছিলেন শুভও শিক্ষকতাকেই যেন পেশা করে,শুভ সেই স্বপ্নটাকেই বাস্তব করে।তবে বাবা চলে যাওয়ার পর অর্থকষ্ট কি সেটা ওরা হাড়ে হাড়ে বুঝেছিল।মা কলেজের পড়া শেষ না করে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন বলে,বাবার চাকরিটাও পায়নি,আর বাবার রোগের কথা জানতে পেরে শেষ ছ’মাস যতটা পেরেছিল চিকিৎসা করিয়েছিল, আর তাতেই জমানো পুঁজি ,বাবার পি.এফ সবই প্রায় শেষ হয়ে যায়।এরপর ছেলে মা মিলে টুইসন পড়িয়ে, আর সেলাইয়ের কাজ জানা মা সারারাত ধরে সেলাইয়ের কাজ করে শুভর পড়া, সংসার খরচ চালিয়েছে।উচ্চমাধ্যমিকের সময় বাবার সহকর্মীরা বিনা পয়সায় টুইসন পড়িয়েছিলেন বলে মেধাবী শুভর সায়েন্স নিয়ে পড়া হয়েছিল,কিন্তু তারপরই বাংলাকে ভালোবেসে বাংলায় অনার্স নেয়।আর তাতে করে অর্থের চাপটাও একটু কমে।নিজের ভালোবাসা উজাড় করে পড়েছিলো বলেই হয়তো আজ ও এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছে,সবার আদর্শ হতে পেরেছে।মা কে আর কষ্ট পেতে দেবেনা ভেবেই মার শত চেষ্টাতেও আজ অবধি বিয়ে করেনি,যদি ‘সে’ মা কে না বুঝে কষ্ট দেয়?সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ,এখন আবার সেইসব আত্মীয়রাই ফিরে আসছে শুভর বিয়ের উদ্যোগ নিতে।শুভ অবাক হয়ে যায়,মা কিকরে এদের আসল রূপটা ভুলে গেল আর ক্ষমা করে দিলো সে কথা ভেবে। প্রায়ই মার কাছে ঝামেলা করে এই বিষয় নিয়ে।ও কিকরে ভুলে যাবে সেই নরম মনের ছেলেটা কত ধাক্কা খেয়ে খেয়ে আজকের শুভঙ্কর হয়েছে। কলেজে পড়তে একটা মেয়েকে ভালো লেগেছিল তার কবিতা আবৃত্তি শুনে,মেয়েটি জানতে পেরে অপমান করে বলেছিল তাদের বাড়ির কাজের লোকের অবস্থা শুভদের চেয়ে ভালো।শুভ তারপর থেকে আর কোনোদিন কোনো মেয়ের দিকে তাকাইনি।কিন্তু এখন চাকা ঘুরেছে,ব্যক্তিত্বময় শুভঙ্কর সেনের দিকে অনেক মেয়েই আকৃষ্ট হয়,যেদিন থেকে কলেজে পড়াতে শুরু করেছে প্রত্যেক ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে বেশ কিছু লাভ লেটার পায় ছাত্রীদের থেকে,যাদের অনেকে হয়তো অন্য বিষয়ের অনার্স।কিন্তু আজ অবধি কোনোটাই খুলে পড়েনি।আসলে অনেক লড়াইয়ের পর শান্তিতে চলা জীবনটা আর ঘাঁটতে মন চাইনা।পড়ানো, পড়া,কনফারেন্স,সম্মান আর সর্বোপরি মা…এই নিয়ে ভালোই কাটছে তার দিন।শুধু শেষ তিন মাস ওই চোখ গুলো মাঝে মাঝে মনের মধ্যে ভেসে ওঠে।আর একটা কারণও হয়তো আছে….কবিতা।ওদের কলেজের প্রথম দিন যখন মেয়েটা কবিতা আবৃত্তি করছিল বন্ধ দরজার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় শুভর পা আটকে গেছিল।পরে ক্লাস নিতে গিয়ে গলা শুনে বুঝেছিল ওটা ওর গলা ছিল।শুভ এটাও জানে মেয়েটা একটা সম্পর্কে জড়িয়েছে, কিন্তু ওই সৌরভ নামের ছেলেটাকে আজ তিন বছর দেখছে,ওরকম উদ্ধত ছেলে খুবই কম দেখেছে ও।আর এটাও জানে ওরকম ছেলেরা নিজেদের কেই শুধু ভালোবাসে।পুজোর ছুটি পড়ার আগে কাল কলেজের শেষ দিন,কাল কি পর্ণা আসবে?
আজ কলেজের বেশিরভাগ মেয়ে শাড়ী পরে এসেছে,সুশী রাতে মেসেজ করে দিয়েছিল তাই পর্ণার পরণেও তার মায়ের হলুদ ঢাকাই জামদানি শাড়ী।সত্যি বলতে কি হলুদ রঙে ওকে এত মোহময়ী লাগে যে চোখ ফেরানো যায়না।আজ সব বন্ধুদের এ বলছে আমায় দেখ,ও বলছে আমায়।আসলে শাড়ী পরে সবাই আজ লাস্যময়ী। পর্ণার চোখ এতক্ষন যাকে খুঁজছিল সেই সৌরভ কলেজ এলো দুপুর ১২টার পর।ততক্ষনে পর্ণার চোখের কাজল অল্প ঘেঁটে গেছে,লিপস্টিক মুছে গিয়ে তার হালকা আভায় ঠোঁটগুলো গোলাপি।সব মিলিয়ে আরো অপরূপা লাগছে ওকে।মাঝের সিঁথি করে আঁচড়ানো সামনের দিকের অবাধ্য চুলগুলো কপালে এসে পড়ছে বারবার, ছোট লাল টিপটার ওপর দিয়ে।সৌরভ যখন কলেজে এলো তখন সব ইয়ারের ছেলে মেয়ে প্রায় নিচে চলে এসেছে,শেষদিন ক্লাস কোনো হবেনা সেভাবে তাই আজ পুজোর আগে শেষ কেনাকাটার সুযোগ সবার কাছে।সৌরভ পর্ণাকে দেখে একটু হোঁচট খেলো যেন,মেয়েটা ওকে পছন্দ করে সেই প্রথম দিন থেকে,সেটা ওর চোখ দেখে বুঝেছিল।তাই প্রশয় দিয়েছিল,কিন্তু মুগ্ধ কোনোদিনই হয়নি পর্ণা তে।সৌরভ কে দেখে পর্ণা এগিয়ে এলো।-“কিরে আজ কলেজ আসবি বলিসনি তো।আমি তো তাই এত দেরিতে এলাম।”সৌরভ অবাক গলায় বলল। ‘তুমি তো জানার চেষ্টা করোনি আসবো কিনা?’ মনে মনে এটা ভাবলেও পর্ণা মুখে বললো,”তুমি তো ফিরেছ সেটাই জানিনা”।সৌরভ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললো,”ওহ,তোকে বলা হয়নি না?তুই তো কাল ফোনও করিসনি।””তুমিও তো করতে পারতে।”পর্ণার কথায় হোহো করে হেসে সৌরভ বললো,”আরেববাস!মহারানীর যে দেখছি অভিমান হয়েছে।ওকে বাবা,সরি,সরি।আমারই ভুল।ক্ষমা করে দিন।”বলে দুহাত দিয়ে দু কান ধরলো। পর্ণা সঙ্গে সঙ্গে লজ্জা পেয়ে ,”আরে কি করছো সবার সামনে?ঠিক আছে,ঠিক আছে।ক্ষমা ক্ষমা”,বলে হাতটা ওপরে তুললো আশীর্বাদ ভঙ্গিতে। দুজনেই হাসতে লাগলো তারপর। হটাৎ সৌরভ বললো,”কোথায় যাচ্ছিস তোরা?চল ওপরে রুমে চল, কথা আছে।” “কিন্তু আজ তো ক্লাস হবেনা,তাই আমরা বেরিয়ে যাচ্ছিলাম।আর একটু দেরি হলে দেখা হতোনা তোমার সাথে।”পর্ণা তাড়াতাড়ি বলে উঠলো।”আরে চল চল,ওপরে গিয়ে একটু বসি।কতদিন কথা হয়নি তোর সাথে।আবার কাল থেকে ছুটি পরে যাবে।ফোনে কথা বলে কি ভালো লাগে সবসময়।চল না প্লিজ।”সৌরভের কথায় পর্ণা দ্বিধায় পরে গেল।সুশীরা এখুনি বেরিয়ে যাবে,আবার এতদিন পর সৌরভের সাথে থাকতেও ইচ্ছা করছে।সুশীরা থাকবেনা শুনে সৌরভ বললো,”ঠিক আছে ওদের চলে যেতে বল, আমি তোকে স্টেশন পৌঁছে দেব।”যদিও সুশী একটু মনোক্ষুন্ন হলো,কিন্তু পর্ণার মনটা খুশিতে ভরে গেল।আজ বাবাও হটাৎ ফিরে পড়েছে,তাই মা কে নিয়েও চিন্তা নেই। সৌরভ আজ প্রথমবার ওর হাত ধরে প্রায় টেনে ওপরে নিয়ে গেল হাসতে হাসতে।থার্ড ইয়ারের ঘরের জানলা সব বন্ধ থাকায় প্রায়ান্ধকার ঘরে ঢুকে পর্ণা যেই জানলা খুলতে গেল সৌরভ ওর হাত ধরে টেনে ঘরের আরো অন্ধকার একটু কোনে নিয়ে গিয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে নিজের নিকোটিনের গন্ধমাখা ঠোঁটটা চেপে ধরলো ওর নরম গোলাপি ঠোঁটে,পর্ণার সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল।সৌরভের হাতের মধ্যে ও কেঁপে উঠলো,আর সৌরভ ওর ডান হাতটা নিয়ে গিয়ে ঠেকাল শাড়ীর মধ্যে দিয়ে সরু হয়ে বেরিয়ে থাকা ওর মসৃন পেটে।পর্ণা ছটফট করে উঠলো,বেরিয়ে আসতে চাইলো সৌরভের বাহুডোর থেকে।কিন্তু পারলোনা।এক সময় দম বন্ধ হয়ে গা গুলিয়ে উঠলো ওর,তাও সৌরভের ঠোঁট ওর ঠোঁটকে পিষতে লাগলো যেন।প্রথম চুম্বনের ভালো লাগা চলে গিয়ে কেমন যেন অস্বস্তি হতে লাগলো পর্ণার।হটাৎ গায়ের সব জোর দিয়ে ঠেলে সৌরভকে সরিয়ে দিয়ে হাঁফাতে লাগলো ও।সৌরভ খুবই বিরক্ত গলায় ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,”হোয়াট দ্য হেল!কি হলো তোর?ওভাবে ধাক্কা দিলি কেন?”দম নিতে নিতে পর্ণা বললো,”আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলামনা।আর তুমি এরকম করবে আমি বুঝতেও পারিনি।বলোওনি কিছু!””মানে!!!!!!কিস করবো কি তোর পারমিশন নিয়ে নাকি?পাগল নাকি তুই?তোদের মতো মেয়েদের এই এক সমস্যা।সব বিষয় ব্যাকডেটেড।”সৌরভ এর গলায় রাগ ঝরে পড়লো এবার।”ঠিক আছে,বাদ দে।চল তোকে ছেড়ে আসি।”সৌরভের ব্যবহারে অবাক পর্ণা ভাবলো তাহলে সময় কাটানো মানে এটাই বোঝাতে চেয়েছিল সৌরভ!নিজের ইচ্ছাটা জোর করে চাপিয়ে দেয়ার নাম কি ভালবাসা? কোনোদিনও কারোর সাথে এভাবে ঘনিষ্ট হয়তো সে হয়নি,কিন্তু ওই চুম্বনে যে কোনো রোমান্টিকতা নেই,আছে শুধুই কামনা এটা সে বুঝেছিল।আর এটাও বুঝেছিল সৌরভ এব্যাপারে একদমই আনাড়ি নয়,যথেষ্ট দক্ষ।অনেক কিছু পর্ণা অনুভব করতে পারছিল,তাই কোনো কথা না বলে চুপচাপ বেরিয়ে এলো ঘর থেকে।বাইরে বেরিয়ে আর এক চমক।ওপরে ওঠার সময় খেয়াল করেনি ওরা কিন্তু ওদের বাংলা বিভাগের যে নিজস্ব ‘টিচার্স রুম’ আছে সিঁড়ির পাশে ওখানে কেউ একজন আছেন।পর্ণাকে ঘর থেকে বেরোতে দেখে তাড়াতাড়ি ওই ঘরে ঢুকে গেলেন।সৌরভ এখনো ঘর থেকে বেরোইনি,কার একটা ফোন এসে যাওয়ায় কথা বলছে।পর্ণা পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলো স্যারদের ঘরের দিকে।আধ খোলা দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলো এস.এস স্যার দুহাতে মাথার দুটো রগ টিপে টেবিলে কনুই ঠেকিয়ে চোখ বুজে বসে আছেন,যেন মাথায় খুব কষ্ট হচ্ছে।কেন যেন পর্ণার মনে হলো স্যার কিছু দেখেছেন বা শুনেছেন,লজ্জায় কোনো আওয়াজ না করে চুপচাপ সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলো।সৌরভের বাইকে উঠতে আর ইচ্ছা করছিলোনা।খুব কান্না পাচ্ছিল ওর।একটা রিকশা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাতে উঠে বসে বললো,”স্টেশন”।সৌরভকে কিছু বলার ইচ্ছাও হলোনা।রিকশা চলতে শুরু করার পর ওর হাতের ফোনটা বেজে উঠলো,তাকিয়ে দেখল ‘সৌরভ’,ধরতে ইচ্ছা হলোনা।ফোনটা কেটে মেসেজ করলো,’তুমি চলে যাও।আমায় ছাড়তে যেতে হবেনা।আমি চলে যাবো।বাই।’ রিকশায় ৫-৬মিনিট লাগে স্টেশন,বারবার চোখটা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল ওর।ও বুঝতে পারলো ওর জীবনের প্রথম ভালোবাসা অসম্পূর্ণই থেকে যাবে,কারণ স্বপ্ন আর বাস্তবের যে আকাশ পাতাল তফাৎ। তাই স্বপ্নের পিছনে ছুটে বাস্তবকে উপেক্ষা করতে ও পারবেনা।তাহলে ভবিৎসতে ওকে আরো কষ্ট পেতে হবে।আবেগে ভেসে আর বাইরের রূপ দেখে ও একটা ছোট ভুল করে ফেলেছে,কিন্তু যদি এখনই না সংযত হয়ে শোধরায় পরবর্তীকালে এটাই বিরাট ভুল হয়ে দেখা দেবে।আসল সৌরভকে ও হয়তো চিনতে চায়নি এতদিন,তাই চোখটা বন্ধ করে রেখেছিল।এমনকি বন্ধুদের কথাও গুরুত্ব দিয়ে শোনেনি।আজকের একটা ঘটনা ওর চোখ খুলে দিয়েছে।কিন্তু ওই সব কিছুর ওপরে একটাই খটকা মাথায় ঘুরছে,এস.এস স্যার যদি দেখেও থাকেন,কিছু না বলে চলে যাওয়াটা স্বাভাবিক,কারণ এটা কলেজ।কিন্তু ওভাবে বসে ছিলেন কেন?ওনার মুখ জুড়ে ওই কষ্টটাই বা কিসের? সব মিলিয়ে পর্ণার স্বাভাবিক চিন্তা করার ক্ষমতা বাধা পাচ্ছিল।ওর শরীর আর মনে একটা অব্যক্ত যন্ত্রনা হচ্ছিল।ও বুঝতে পাচ্ছিল মনের ওপরের চাপ শরীরে প্রভাব ফেলছে।ও চাইছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি ফিরে মা বাবার বুকে লুকোতে।একটা আশ্রয়,নিরাপদ আশ্রয় এই মুহূর্তে খুব দরকার ওর,আর সেটা বাবা মার কাছে সম্ভব।মুখ ভার করে আসছিল আকাশের , যেকোনো মুহূর্তে বৃষ্টি নামবে। তার আগেই পর্ণা কে ফিরতে হবে,পৌঁছতে হবে ওর সেই নিরাপদ আশ্রয়ের কাছে।
ক্রমশ…