দ্বিতীয় পর্ব:-
শুভঙ্কর স্যারের পড়ানোর ধরন সত্যি আলাদা।কত কঠিন বিষয়ও কত সহজ করে বুঝিয়ে দেন।ভাষার ওপর অত্যধিক বেশি দখল।নোটস দিয়ে বুঝিয়ে দেন তাই,নাহলে ওই ভাষা মনে রাখা খুবই চাপ,তবে যদি কেউ সহজ ভাবে লিখতে চায় তাকে বাধা তো দেননা,উল্টে উৎসাহ দেন,শুধরে দেন তার ভুল ত্রুটি। একদিন শুধু পর্ণা ওনার একটা নোটসকে একটু সরলীকরণ করে লিখে দেখাতে গেছিল উনি দেখেননি।ও অবাক হয়ে তাকাতে শুধু বলেছিলেন,”আমি জানি তুমি আমার দেয়া নোটস তৈরি করতে পারবে।তোমার ক্ষমতা সম্বন্ধে তোমার চেয়ে আমার জ্ঞান বেশি।তাই ওটাই তৈরি করো।” সৌরভের সাথে পর্ণার বন্ধুত্ব রাজধানীর গতিতেই এগোচ্ছে।যদিও ওটাকে বন্ধুত্ব না বলে সম্পর্ক বলাই যায়, কিন্তু প্রপোজ বলতে যা বোঝায় সেটা কোনো তরফ থেকেই হয়ে ওঠেনি এখনো। সৌরভদের বাড়ি কলেজ থেকে ২০মিনিট হাঁটা পথ,যা সৌরভের ‘রয়্যাল এনফিল্ড’ এ আস্তে ৫মিনিট লাগে,তবে সৌরভ কে সপ্তাহে হাতে গোনা কদিনই কলেজে দেখা যায়।বেশির ভাগ দিনই ওর ব্যস্ততা থাকে ওর গানের ব্যান্ডকে ঘিরে। পর্ণা লক্ষ্য করেছে সৌরভ নিজের সিদ্ধান্তে খুব দৃঢ়,কারোর কথা শোনেনা।আর কোনো কিছু পাওয়ার ইচ্ছা হলে,সেটাকে সহজে ছেড়ে দেয়না।ওর জড়তা,বা লজ্জা ভয় এগুলো একদমই নেই।আলাপের দ্বিতীয় দিনই যেভাবে ছাদে পর্ণার পিঠে এসে হাত রেখেছিল,ও তো প্রথমে ভীষণ অবাকই হয়ে গেছিল।ওকে আরো অবাক করে দিয়ে সৌরভ বলেছিল,”কিরে আমার কথা ভাবছিলি নাকি?” পর্ণা হকচকিয়ে গিয়ে উত্তর দিয়েছিল,”মোটেই না।” সৌরভ সেটা যেন বিশ্বাসই করেনি।উল্টে ওর চোখে চোখ রেখে বলেছিল,”সত্যি বলছিস!?” পর্ণা কিছু না বলে চুপ করে গেছিল।ওইদিন সৌরভ পর্ণার শেষ ক্লাসের পর ওকে নিয়ে লোকাল কফি শপে যায়,অনেক কথা হয়।সৌরভ বলে বেশি,পর্ণা শোনে।সৌরভের বাবার অনেকরকম ব্যবসা,ওই অঞ্চলের একজন কোটিপতি ব্যবসায়ী উনি।ছেলের ব্যাপারে উনি উদার,টাকা পয়সার অভাব তাই সৌরভের কোনোদিনও হয়না।ওর মা নিজের বান্ধবী,কিটি পার্টি নিয়ে ব্যস্ত থাকে সারাদিন।সৌরভ শুধু রাতে শুতে বাড়ি যায়।বেশিরভাগ সময় ওদের নিজস্ব ক্লাবে গান বাজনা নিয়েই মেতে থাকে।ও লিড গিটারিস্ট,সাথে গানও গায়।পরে সৌরভের সাথে মিশতে মিশতে পর্ণা বুঝেছে সৌরভের সব ভালো, তবে ভীষণ মুডি।আর প্রচন্ড ডমিনেট করে সবাইকে,পর্ণা কেও।ও যদি চায় পর্ণাকে ওর জন্যে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়,কিন্তু পর্ণার কোনোদিন ৫মিনিট দেরি হলে ও দাঁড়ায়না।এমনকি তারপর বেশ কিছু ঘন্টা ফোনও ধরেনা ওর।তাও সৌরভের মধ্যে এমন কিছু আছে,যার টান পর্ণা উপেক্ষা করতে পারেনা।
দেখতে দেখতে কয়েক মাস কেটে পুজো এসে গেল,সবাই ব্যস্ত শপিং নিয়ে।শুধু পর্ণার কিছু ভালো লাগছেনা।সৌরভ নেই, কিছুদিনের জন্য নর্থবেঙ্গল গেছে ওর ব্যান্ডের শো করতে,সাথে ওর পুরো দল। ওদের কাউকেই পর্ণা চেনেনা।কিন্তু সৌরভ ছাড়া ওর বড্ড ফাঁকা লাগে আজকাল।তারপর কদিন হলো মায়ের শরীরটাও ঠিক নেই।সেদিন ক্লাসে সব মিলিয়ে একটু অন্যমনস্ক ছিল,এস.এস স্যার যাতা বলে অপমান করলেন।আচ্ছা, ওনার কি কোনো সংসার নেই,কোনো চিন্তা নেই!একটু মন অন্যদিকে তো থাকতেই পারে।মানুষ তো, রোবট তো নয় যে মন থাকবেনা!জোর করে সবাইকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা।সব মিলিয়ে পর্ণার মনের অবস্থা বাইরের ওই আকাশটার মতোই,যেটা আজকাল পুজোর আগে প্রতিবছর মুখভার করে থাকে।হয়তো সৌরভ ওর সাথে শপিংয়ে যেতনা,কারণ ও অনলাইনে আর বড় মল ছাড়া কেনাকাটা করেনা।যেখানে ক্রেডিট কার্ড নেয় সেখানেই ও কিছু কেনার যোগ্য ভাবে,তাই ছোট ছোট দোকানে ঘুরে ঘুরে দরদাম করে কেনার আনন্দ ওর কোনোদিন ছুঁয়ে দেখা হয়নি।-“এই পর্ণা!কি এত ভাবছিস?চ আজ আমাদের সাথে লোকাল মার্কেটে শপিং করবি।সৌরভদা তো নেই,চল আজ আমাদের সাথে।কতদিন যাসনি।” সুস্মিতার কথায় যেতে ইচ্ছা করলেও পর্ণা বললো,”না রে,আজ হবেনা।আজ মা কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।সন্ধ্যের পর এপয়েন্টমেন্ট,কিন্তু ডক্টর চেম্বার কিছুটা দূরে।এই মেঘলা দিনে মা স্কুটিও বের করতে দেবেনা।রিকশায় সময় লাগবে।আজ তাই তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।”-“কি হলো আবার কাকিমার।কিছু বলিসনি তো।”-“না ওই জ্বর আর কি,কিন্তু এক সপ্তাহ হয়ে গেল কমছেনা।তাছাড়া খাওয়া দাওয়াও করতে পারছেনা।বাবাও অফিসের কাজে শিলিগুড়ি গেছে।”-“আচ্ছা।যদি কোনো দরকার লাগে বলিস।”-“হ্যাঁ রে নিশ্চই বলবো।”-“তাহলে আজ একা ফিরবি?আমার তো দেরি হবে”।-“আরে বেবি।টেক উর টাইম।আমি এই অনার্স ক্লাসটা করেই বেরিয়ে যাবে।”-“বাব্বা!তোর কথা বলার স্টাইল ও তো সৌরভদার মতো হয়ে গেছে কদিনে।দেখিস নিজেকে পুরোটাই বদলে ফেলিসনা।”সুস্মিতার খোঁচাটা গায় মাখলনা পর্ণা।ও জানে সুশী সৌরভকে ঠিক পছন্দ করেনা।কিন্তু কেন সেটাই বুঝতে পারেনা।ফেরার পথে সৌরভ কোনো কোনোদিন স্টেশন পৌঁছে দিতে চাইলে সুশী যেতে চাইতোনা।বলতো,”তুই যা”।তখন পর্ণা ভাবতো হয়তো ওদের একা ছাড়তে চায় বলে,কিন্তু পরে বুঝেছে তা নয়।সুশী সৌরভকে একদমই পছন্দ করেনা।হয়তো সৌরভ এর নাক উঁচু মনোভাবের জন্যেই অনেকে ওকে এড়িয়ে চলে।সৌরভ একদিন বলেছিল পর্ণাকে,”শুধু ব্যান্ডকে যাতে বেশি সময় দিতে পারি তাই এই বাড়ির কাছের কলেজে ভর্তি হয়েছি।বাবা তো রাজি হচ্ছিলনা।নাহলে এখানে সৌরভ সরকার ঘুরতেও আসতো না।ওই একই কারণে বাংলার মতো একটা বিষয় অনার্সও নিয়েছি।নাহলে বাংলা আবার ছেলেরা পড়ে!” পর্ণা অবাক হয়ে বলেছিল, “কোন বিষয় ছেলেরা পড়বে,কোনটা মেয়েরা এটা আবার ঠিক করা থাকে নাকি?” সৌরভ আর কোনো উত্তর দেয়নি। অন্য কেউ এরকম কিছু বললে পর্ণা তাকে ধুয়ে রেখে দিতে,কিন্তু কেন কে জানে সৌরভ কে আঘাত করতে ও পারেনা।সেটাই হয়তো ওর পুরোনো বন্ধুদের মানতে কষ্ট হয়,ওর বদলে যাওয়া।
মা খুবই দুর্বল হয়ে গেছে,তারপর এরকম আবহাওয়া।ধরে ধরে মা কে রিক্সা থেকে নামিয়ে ড: মুখার্জীর চেম্বারে নিয়ে গেল।মা কে বসিয়ে ডাক্তারের সহকারীর দিকে এগিয়ে গেলো কত নম্বর চলছে জানতে।দেরি আছে কিছুটা বুঝে ফিরে আসছে,শুনলো কেউ ওর নাম ধরে ডাকছে।ফিরে তাকিয়েই বুক ধড়াস করে উঠলো,ওরে বাবা ‘রয়াল বেঙ্গল টাইগার’ এখানে কি করছেন!গলাটা শুকিয়ে গেছিল,যাহোক করে ঢোঁক গিলে এগিয়ে গেলো শুভঙ্কর স্যারের দিকে।-“কি ব্যাপার, তুমি এখানে?” ক্লাসে পড়ানোর গম্ভীর গলা নিয়ে প্রশ্ন শুনে পর্ণা অবাক।কি বাওয়াল!ডক্টর চেম্বারও কিনে রেখেছেন নাকি?এ আবার কেমন প্রশ্ন!-“না মানে স্যার, মার শরীরটা ভালো নেই আর কি।….তাই আর কি।”মনে যাই ভাবুক মুখে তুতলে যাহোক করে উত্তর দিয়ে পালাতে পারলে বাঁচে।হটাৎ পাশ থেকে শান্ত গলায় এক ভদ্রমহিলা বলে উঠলেন,”এই শুভ,তুই কি এটা কলেজ পেয়েছিস?ওভাবে কেউ ভয়ঙ্কর গলায় খোঁজ নেয়।দেখ বেচারি কিকরকম ভয় পেয়ে গেছে।তোর মাস্টারমশাই গিরি বন্ধ করত।” গলার আওয়াজ শুনে পর্ণা সেদিকে তাকালো…দেখলেই ভালো লেগে যাবে এরকম শান্ত মুখের এক ভদ্রমহিলা।পোশাক পরিচ্ছদ খুবই পরিপাটি,মুখে বয়সের ছাপ পড়লেও বোঝা যায় এক কালে মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো সুন্দরী ছিলেন,তবে তার ব্যাক্তিত্ব সৌন্দর্যকে অন্য রূপ দিয়েছে।কিন্তু মুখে সবসময় যেন একটা হালকা হাসি, যেটা দেখলে মনেহয় বাক্তিত্বময়ী মহিলার আড়ালে যেন একজন মা লুকিয়ে।পর্ণার প্রথম দেখাতেই খুব ভালো লেগে গেলো।কিন্তু ইনি কে?যদিও ‘রয়াল বেঙ্গল টাইগার’এর সাথে মুখের মিল আছে।পর্ণার ভাবনার মাঝেই উনি বলে উঠলেন,”আমি শুভ মানে তোমাদের স্যারের মা।” স্যারের মা বলে কথা,তাই পর্ণা পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলল,”আমি পর্ণা”।ভাগ্গিস এস.এস একটু সরে গেছিল ডাক্তারের ওখানে কত দেরি দেখতে,নাহলে ওই ভদ্রলোকের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে গেলেও হাঁটু কেঁপে যেত। পর্ণা মায়ের কাছে ফিরে এসে বললো সব কথা আর ইশারায় স্যার কেও দেখিয়ে দিল।ওর মায়ের শরীর খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছিল,চুপচাপ শুধু শুনলেন।যে মা সারাক্ষন ওর পিছনে খিটখিট করতো বলে ও বিরক্ত হতো,সেই মা কে এই কদিন এত চুপচাপ দেখে ওর কিছু ভালো লাগছিলোনা,খালি কান্না পাচ্ছিল।ওদের বাড়ির কাছাকাছি যে ডাক্তারকে ওরা দেখায়,তার ওষুধ খেয়ে একসপ্তাহে উন্নতি হওয়ার বদলে যেন অবনতি হয়েছে।তাই তো আর বাবা ফিরে আসা অবধি অপেক্ষা না করে ও নিজেই নিয়ে এসেছে ড: মুখার্জির কাছে। ডাক্তার ভালো করে পরীক্ষা করলেন।প্রাথমিক ভাবে বললেন,বুকে খুব বেশি ঠান্ডা বসেছে আর কতকগুলো রক্ত পরীক্ষা করে তাড়াতাড়ি রিপোর্ট দেখিয়ে যেতে বললেন। পর্ণাকে কঠিন ভাবে বললেন যাতে ওর মা রেস্ট নেন অন্তত এক সপ্তাহ,স্নান একদম বারণ আর খাওয়া হালকা। সব শুনে পর্ণা চোখে সর্ষে ফুল দেখলো যেন।যে মার ওপর নির্ভর করে ও বাঁচে,তাকে সামলাতে হবে কদিন পর্ণা কে। কিন্তু মার জন্যে ও সব পারে,যতই চেঁচাক মা ছাড়া ও অচল। ওষুধ কিনে,ইনজেকশন দিয়ে বাড়ি ফিরতে অনেকটাই রাত হলো। পর্ণার প্রাত্যহিক জীবনে শুরু হলো যেন এক লড়াই।সংসার অনভিজ্ঞ পর্ণার ঘাড়ে এসে পড়ল সংসারের যাবতীয় কাজ।কলেজ কামাই করেও মার শুশ্রশা ওর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়লো।ক্লান্ত শরীর বাবার ফেরার অপেক্ষা করতে লাগলো আর ক্লান্ত মন সৌরভের। রাতের রান্না করছিল পর্ণা…মোবাইল বাজার আওয়াজ পেলো…সুশী ফোন করছে।-“হ্যাঁ সুশী বল।”-“কাকিমা কেমন আছেন রে?কাকু ফিরবেন কবে?”-“মা অনেকটা ভালো রে।রক্তের রিপোর্টে খারাপ কিছু নেই।শুধু ইওসিনোফিল বেশির দিকে।পুরোনো ফর্মে ফিরছে,আজকেই আমার ওপর অনেকদিন পর একবার চেঁচিয়েছে।এটাই সুস্থ হওয়ার লক্ষণ।”বলে পর্ণা খুব হাসতে লাগলো,সুশীও ওদিকে হাহা করে হেসে উঠলো।পর্ণা আবার বললো,”বাবা পরশু ফিরবে।এবারই বড় ট্যুর ছিল,প্রায় দু সপ্তাহের ওপর।তারপর কলেজের খবর বল।”-“কাল তো পুজোর আগে শেষদিন কলেজের।আসছিস তো?”সুশীর প্রশ্নে পর্ণা থমকাল।আরে তাই তো পুজো তো এসে গেল।কাল কলেজ বন্ধ হচ্ছে,যেতে তো হবে।-“ভাগ্গিস তুই ফোন করলি।মায়ের অসুখ আমায় দিনের হিসেব ভুলিয়ে দিয়েছিল।কাল কটার ট্রেনে যাবি?মা এখন অনেকটা সুস্থ,আমি কাল যাবো।”-“৯টার ট্রেনটাই ধরবো সবাই।হ্যাঁ শোন না আর একটা কথা বলবো বলেও ফোন করেছি।”-“হ্যাঁ বল।”-“আজ এস.এস স্যার তোর খোঁজ করছিলেন জানিস”।-“স্যার!!!!???”পর্ণার অবাক হওয়া প্রশ্নের উত্তরে সুশী বললো-“সব শুনে বলেন কি,’মায়ের অসুখ করলে কি কলেজ কামাই করতে হবে এতদিন!কেন লোকে বিয়ের পর সংসার সামলে পড়াশোনা করেনা?’আমি কি বলবো শুধু হ্যাঁ হু করে গেলাম।”-“মানে!!!ভদ্রলোকের দাবি কি?এবার কি স্টুডেন্টদের পার্সোনাল জীবনে ঢুকেও দখলদারি করবেন?কে বলবে ওই মায়ের এই ছেলে?একটা রোবট যেন।” সুশীর কথা শুনে পর্ণার মাথায় আগুন জ্বলে গেল।সুশী অবাক হয়ে বলল, “কার মা?”-“আরে এস.এস এর।মাকে নিয়ে যেদিন ড: মুখার্জীর কাছে গেলামনা?ওখানেও ইনি ছিলেন।সব জানে মার শরীর ভালো না।তাও এরকম কথা।ছাড়, ও ভদ্রলোক এসব বুঝবেনা।আমায় কিছু বললে আমি এবারে ক্লাসের মধ্যে যা বলবো,তাতে বেড় করে দেন দেবেন।”-“আরে রিলাক্স।অত উত্তেজিত হোসনা।তারপর সৌরভদা গেছিল নাকি কাকিমা কে দেখতে?”-“সৌরভদা !আরে ওতো এখন নর্থ বেঙ্গল।আর থাকলেও মা কে দেখতে আসতনা।আসা ভালো দেখায়না।”পর্ণা বলতে পারলোনা সৌরভ মায়ের অসুখের খবর শুনেও পরে একদিনও খোঁজ অবধি নেয়নি।ও যখন কান্না জড়ানো গলায় ওকে বলেছিল,সৌরভ জাস্ট এড়িয়ে গেছিল।-“কিন্তু সৌরভ দা তো কাল কলেজ এসেছিল।ক্লাস ও করেছে দেখলাম।তোকে কিছু বলেনি?”সুশী অবাক হয়ে বলল।পর্ণা আকাশ থেকে পড়লো,সৌরভ ফিরে ওকে জানায়নি।কিন্তু সুশী কে বুঝতে না দিয়ে বললো,”ও হ্যাঁ,আমার তো খেয়াল ছিলোনা।বলেছিল তো ফিরবে।”তারপর একটু থেমে বললো,”সুশী রে এবার ফোন রাখছি।রান্নাটা শেষ করে নিই।কাল দেখা হবে ,বাই।”-“ওকে,বাই।”ফোন রেখে পর্ণার একটু মন খারাপই হয়ে গেল।সৌরভ ফিরে পড়েছে অথচ ওকে জানায়নি অবধি!কাল রাতে পর্ণাই ফোন করেছিল,সৌরভ ধরে সামান্য কথা বলে আর টায়ার্ড আছে বলে ফোন রেখে দিলো।একবারও বললো না ফিরে পড়েছে।আসলে পর্ণা কোনোদিনই জোর দেখায়নি ওর ওপর,তার ওপর এখনো ও অফিসিয়ালি ওকে কিছু বলেওনি সৌরভ।তবে প্রথম থেকেই ভালোবাসা বা ভালোলাগা পর্ণার দিক থেকেই বেশি ছিল,সেই প্রথম দিন থেকে।সৌরভ শুধু প্রশয় দিয়েছিল,তাও সেটা প্রথম দিকেই বেশি।ওটাই সৌরভের প্রকৃতি ভেবে পর্ণা মেনে নিয়েছিল।কিন্তু আজকাল যেন বেশিই এড়িয়ে যাচ্ছে সৌরভ।আর ভাবতে ভালো লাগছেনা।কাল দেখা হলে সরাসরি নাহয় জিগেস করবে।যদি উত্তর দেয় ভালো,না দিলে ছেড়ে দেবে।আসলে পর্ণার জীবনের প্রথম ভালো লাগা,হয়তো বা ভালোবাসাও, তাই এই ব্যাপারে ও এতটা স্পর্শকাতর।কিন্তু ও তো জানে সৌরভ এর আগেও সম্পর্ক ছিল,কিন্তু সবাই বড় বেশি বাঁধত বলে ও সব ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল।পর্ণা ওকে স্পেস দেয়,তাইনা ও সম্পর্কটা তাও এতদিন ধরে রেখেছে।কিন্তু তাও পর্ণা অনুভব করে কোথায় যেন সম্পর্কের সুতোটাই আলগা।পর্ণা বুঝতে পারেনা কি করবে?কি করা উচিত তার…
ক্রমশ…