আরও একবার – একাদশ পর্ব

by Tamali

“গুড মর্নিং।এত সকাল সকাল ফোন!কী খবর ম্যাডাম বলুন”,মানিনীর ফোনে ঘুম ভেঙে মন ভরে গেল অয়নের।বন্ধুত্ব এগিয়ে গেছে আরও একটা মাস।সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি।তাই মানিনী আজকাল যে কোনো দরকারে সবার আগে ফোনটা অয়নকেই করে।
“গরমের জন্যে ড্রেস দরকার।সিপি (CP – caunot place) যাবো আজ,প্লিজ যাবে আমার সঙ্গে?”এখন তুমি বলতে অতটাও অস্বস্তি হয়না মানির।অয়নের একবার বলাতেই মানি তুমি বলা শুরু করেছিল প্রথম দেখা করার দিন থেকে,ওর থেকে বছর পাঁচেকের বড় অয়নকে তুমি বলতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেছিল ও নিজেও।দীপক কাকুরা ছাড়া বিশেষ কোনো পরিজন না থাকায় অয়ন ওর বন্ধু আর গাইড হয়ে উঠেছিল খুব তাড়াতাড়ি।
“সরোজিনী চলো।একটু দূরে পড়বে,তবে বাইকে চাপতে যদি রাজি থাকো তাহলে খুব চাপ হবেনা”,নিজের খাটে চিত হয়ে শুয়ে পায়ের উপর পা নাড়াতে নাড়াতে বলে অয়ন।
প্রথমটা চুপ করে থাকে মানিনী।আজ অবধি কোনো ছেলের বাইকে চাপেনি ও,কারণ উৎসবের নিজের কোনো বাহন ছিলোনা।তাছাড়া এতটা রাস্তা দু চাকা চাপতে একটু ভয়ও করছে ওর,জানেনা অয়ন কীরকম বাইক চালায়।
“কী হলো?ভরসা হচ্ছে না?আমি খুব একটা খারাপ বাইক চালাইনা।আমি আর সৌরভ তো অফিস ছাড়াও সব জায়গায় বাইকেই যাতায়াত করি।এবার যদি তুমি আমার বাইকে চাপতে না চাও সেটা আলাদা কথা”,ওর মুখের দুষ্টু হাসিটা মানি দেখতে পায়না,তাই ভাবে ওকে ভুল বুঝছে অয়ন।তাই তাড়াতাড়ি বলে,”আরে না না,প্রবলেম কী আছে! আসলে এতটা রাস্তা কোনোদিন বাইক চাপিনি তাই ভাবছিলাম”।
“সবই তো প্রথমবার একদিন না একদিন করতেই হয়।এটা না হয় আমার সাথেই ফার্স্ট টাইম করো।ভয় নেই আমি খুব কন্ট্রোলড বাইক চালাই।আর লাঞ্চ কিন্তু আমরা বাইরে করছি”,অয়ন উঠে বসে টেবিল থেকে ঘড়ি নিয়ে দেখে সবে সকাল ন’টা।কান থেকে ফোন সরায়না ও মানিনীর সাথে কথা বলার সময়।
“লাঞ্চ বাইরে করবো! ঠিক আছে আমি ট্রিট দেব”,মানিনী প্রথমে অবাক হলেও সঙ্গে সঙ্গে সামলে নেয়।ও ভেবেছিল দুপুর করে বেরোবে,কিন্তু অয়ন হয়তো তাড়াতাড়ি ফিরতে চাইছে।
“লাঞ্চ তুমি খাওয়াবে,ডিনার আমি খাওয়াবো।এটা তো সোজা হিসেব”,সারাদিন মানির সাথে কাটানোর সুযোগটা ছাড়তে মন চাইনা ওর।
“তুমি কী সারাদিন বাইরে কাটাবে ভাবছো নাকি? লাঞ্চ ডিনার সব প্ল্যান করছো,কতক্ষন লাগবে ওই কটা জিনিস কিনতে?তুমি কিছু কিনবে?”মানি অবাক ভাব লুকোতে পারেনা আর।
“আরে সরোজিনী নগরে বিরাট মার্কেট।দেখতে দেখতে সারাদিন কেটে যায়।আর লাঞ্চে কিন্তু ভালো ঘাড় ভাঙবো তোমার,দিল্লি হাটে খাবো।খেয়ে মার্কেটে কেনাকাটা করে ওখানেই পিজ্জা খেয়ে ফিরবো,ওটাই ডিনার ট্রিট।চলবে?” অয়ন মনে মনে পুরো প্ল্যান ছকে ফেলে।দিল্লিতে নতুন মানিনী কে গাইড করার ইচ্ছাতেই একটু অভিভাবকত্ব দেখায় ও।
মানি একবার ঘড়ির দিকে তাকায় তারপর একটু অন্যমনস্ক স্বরেই বলে,”ঠিক আছে।কখন আসবে তাহলে?আমি রিকশা নিয়ে মেইন রোডে চলে যাব।মেট্রোর পাশের রাস্তা দিয়ে গিয়ে ওই ক্রসিং টায় দাঁড়াচ্ছি।তুমি শুধু ফ্ল্যাট থেকে বেরোবে যখন একবার কল করে দিও।”
“না ম্যাডাম আপনাকে মাঝরাস্তায় দাঁড়াতে হবেনা।আমি পিজির সামনে গিয়ে কল করবো।তুমি তার আগে বেরোবে না একদম।এখন তো ন’টা।এই এগারো নাগাদ তোমার পিজিতে পৌঁছে যাবো।রেডি থেকো”,মানিনী কে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দেয় অয়ন।
অবাক হলেও কিছু বলার সুযোগ মানি আর পায়না।ওকে এসে নিয়ে যাবে ওর দোরগোড়া থেকে…জীবনের এই অভিজ্ঞতাটাও প্রথম।
অদ্ভুত এক উত্তেজনা শুরু হয় অয়নেরও।মোমের সাথে যখন সম্পর্ক শুরু হয় তখন সবে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ঢুকেছে,সেই উদ্বেগ উত্তেজনার সাথে আজকেরটার কোনো মিল পায়না ও।সেদিনের অয়ন গার্লফ্রেন্ড মোমকে ইমপ্রেস করার জন্যে চিন্তায় ছিল বেশি,আর আজকের অয়ন চিন্তায় যাতে কোনো ভুল না করে ফেলে।আসলে বয়সটা ইমপ্রেস করার দিনগুলো হয়তো পেরিয়ে এসেছে,এখন দায়িত্বটা অনেক বেশি কাজ করে। বিশ্বাস আর ভরসা অনেক বেশি দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয় এখন।এখন আর ভাঙার ভয় থাকেনা,ভয় থাকে নিজের ইমেজটা বাঁচিয়ে রাখার।
নিজেকে গুছিয়ে পরিপাটি করে বেরোনোর আগে সৌরভের ঘরে নক করে ও।
“মর্নিং।আমি একটু বেরোচ্ছি।মাসি এখনো আসেনি।আমি আজ দুবেলাই খাবোনা।তুই নিজের মত যা করানোর করিয়ে নিস”,অয়নের গলার উত্তেজনায় সৌরভ বিছানায় উঠে বসে ভালো করে দেখে অয়নকে,ফেডেড জিন্সের সাথে সাদা পোলো টি শার্ট,একটু বেশি ভদ্র লাগছে যেন আজ ছেলেটাকে।যাচ্ছে কোথায়?
সৌরভের মুখে প্রশ্নটা হয়তো পড়তে পারে অয়ন।মুখে হাসি টেনে বলে,”ঠিক ডেট না,তবে সারাদিনের প্ল্যান,মানিনীর সাথে।একটু সরোজিনী যাচ্ছি”।
ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই বাসী মুখে একটা গালাগাল দেয় সৌরভ।বন্ধুদের মধ্যে চলতে থাকা চার অক্ষরের সম্বোধনের পর সৌরভ বলে,”…আমাদের মত সাধারণ মানুষদের ট্রেনের গল্প ট্রেনেই শেষ হয়ে যায়,এই বোকচন্দর ঠিক গল্পটা টেনে নিয়ে যাচ্ছে।শালা এবার লাথ খেয়ে প্যানপ্যান করলে আমি উল্টে তোকে…”,শেষ করতে পারে না ও ওর কথা।অয়ন বলে,”মনেহয় না এবারে ভুল করছি।তবে সম্পর্কটা বন্ধুত্ব দিয়ে শুরু হয়েছে আর মানিনী না চাইলে বন্ধুত্বই থাকবে।চল আমি এলাম এবার।বাই”,সৌরভও কথা না বাড়িয়ে প্রত্যুত্তরে “বাই” বলে চাদরে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ে,আর অয়ন রুমের দরজা টেনে দিয়ে ফ্ল্যাট ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে লক করে বেরিয়ে যায়।

বাথরুম থেকে বেরিয়ে মানি লক্ষ করে ওর ফোনের আলো জ্বলছে।দ্রুত পায়ে বিছানার কাছে এসে ফোন ধরতে ধরতে ফোন কেটে যায়,’বাবা ফোন করেছিল’।
সারাদিন টো টো করে ঘুরে শরীর আর টানছে না।আজ বাবাকেও সারাদিন ফোন করা হয়নি।ছুটির দিন দুপুরে বা বিকেলে অনেক্ষন গল্প করে বাবার সাথে।আজ অয়নের সাথে মার্কেটিং করার সময় একবার ফোন করেছিল বাবা,মানি ধরে “বাইরে আছি” বলে কেটে দিয়েছিল।
এখন প্রায় রাত আটটার বেশি হলো,নিশ্চই চিন্তা করছে।মানিনী এবার একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নেবে ভাবছে,তাহলে বাবা কে এনে দুদিন রাখতে পারবে।
“হ্যাঁ বাবা বলো”,ও কল ব্যাক করার আগেই ওর বাবা আবার ফোন করে।
“কী রে মা,সারাদিন ফোন করিসনি।সেই বিকেলে বললি বাইরে…আমি অপেক্ষা করে করে শেষে নিজেই ফোন করলাম।চিন্তা হচ্ছিল…”,বড্ড উদ্বিগ্ন লাগে মদনের গলা।
“সরি,সরি বাবা।আসলে এখানে গরমে অফিস যাওয়ার ড্রেস তেমন ছিলোনা,তাই কিনতে বেরিয়েছিলাম।পড়েছিলাম এক পাগলের পাল্লায়,সারাদিন ছুটিয়ে মেরে দিয়েছে”,কথা বলার ফাঁকেই ফোনে হেডফোন লাগিয়ে নেয় মানি।শরীর ক্লান্ত আজ,কিন্তু অনেক দিন পর মনটা খুব খুশি।
“বাহ বাহ ভালো করেছিলি।তা সেই পাগলটা কি অয়ন নাকি”,মেয়ের মুখে কদিন ই ছেলেটার নাম শুনছে।উৎসব ওর মেয়েকে ভেঙে দিয়েছিল,প্রবাসে পাঠানোর আগে মেয়ের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিল নিজে।অয়নের কথা সেই চিন্তার কষ্টে মলম লাগিয়েছে।মেয়েটা বেশ খুশি থাকে ছেলেটার সাথে থাকলে,এটা লক্ষ করেছে মদন ঘোষ।
আর ছেলেটার সম্বন্ধে কথা প্রসঙ্গে যা জেনেছে খারাপ লাগেনি।মেয়ে খুশি থাকলেই হলো।
“হ্যাঁ এখানে দীপক কাকু কাকিমা ছাড়া ওই তো আছে একটু ভরসা করার মত।তবে জানো বাবা কেনাকাটা মন্দ হয়নি,আর বেশ সস্তাতেও হলো।বিশাল দরদাম করতে পারে অয়ন।আমি বললাম এত সস্তায় কিনছি টিকবে তো? বলে কিনা ‘বেশিদিন টিকে কী হবে?বছর বছর নতুন নতুন ফ্যাশন স্টাইল আসবে।তাই সস্তায় কেন,সেই বছরটা পড়ো, আবার পরের বছর নতুন স্টাইল মেইনটেইন করো।এটাই বেস্ট প্রসেস’,ভুল কিছু বলেনি বলো?” হাসতে হাসতে বলে মানি।
ওর বাবাও হাসতে থাকে।সত্যি যুগ কত বদলেছে।আগে মানুষের বছরে এত জামাকাপড় কেনার টাকাও ছিলোনা।আর এত স্টাইলও ছিলোনা।পুজোয় একটা আর শীতে দুবছর তিনবছর অন্তর একটা,তাও ছোট হলে।আর বড় দাদা,দিদি থাকলে তাদের পুরোনো জামাকাপড় ছোটরা পরতো।এখন বছরে তিন থেকে চারবার অকেশনে কেনা,তাতেও শেষ নেই।এই স্টাইল মেইনটেইন করতে গিয়ে আরো কতবার যে কাপড় জামা কেনে এখনকার জেনারেশন!মুখে সেসব কিছু মেয়েকে বলেনা,হয়তো ভুল ভাববে,এমনিতেও ওর মেয়ে অপচয় বিশেষ করেনা।দরকারেই খরচ করে ও।
বাবার সাথে টুকটাক বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে ফোন যখন কাটে ঘড়ির কাঁটা ন’টা ছুঁইছুঁই।সন্ধের পর খাওয়া কিং সাইজ পিজ্জা পেট ভার করে রেখেছে,রাতে আর কিছু খাওয়া সম্ভব না।আজ ওর রুমমেট নেই।উইকেন্ডে সে বয়ফ্রেন্ডের ফ্ল্যাটে চলে যায়।এমনি কম কথা বললেও মেয়েটা খারাপ না,না থাকলে একটু হলেও আজকাল ফাঁকাফাঁকা লাগে মানিনীর।
শুয়ে পড়ে মানি।কাল রবিবার বলে একবার ভাবে ল্যাপটপে মুভি দেখবে,তারপর আর ইচ্ছা করেনা।

আজকের দিনটা ও ভাবেনি এতটা ভালো কাটবে।দিল্লি আসার পর থেকে এই প্রথম এত হৈহৈ করে একটা দিন কাটলো।দীপক কাকুদের বাড়ি গেলে উইকেন্ড ভালোই কাটে,কিন্তু আজকের ভালো লাগা অন্যরকম রেশ রেখে গেছে মনে।কিন্তু মানিনী যেন জোর করেই সেই অনুভূতিটা উপেক্ষা করে থাকতে চায়।কারণটা ও হয়তো জানে,কিন্তু গুরুত্ব দিতে চায়না।একটা ক্ষত ওকে অচল করে দিয়েছিল বেশ কিছু দিন,প্রায় মাসখানেক।সেই সময় ওর নম্বরটা ব্লক জেনেও বারবার উৎসবের নম্বরে ফোন করতো,আর প্রতিবার হতাশ হতো।তারপর চাকরি পাওয়ার পর দিল্লি এসে পুরোনো সিমকার্ড ফেলে নতুন সিমকার্ড নেয় ও।মনের জোরে সবার আগে ডিলিট করে উৎসবের নম্বর ফোন মেমোরি থেকে।আজ তিনমাসের বেশি হলো ওই নম্বরটা টিপেও দেখেনি ও।প্রথমদিকে ও একটা ট্রিক বের করেছিল,ওর প্রিয় বান্ধবীর নম্বর সেভ করে রেখেছিলো উৎসবের নামে।ফলে নিজেকে সামলাতে না পেরে নম্বরটা টিপলে কলটা ওই বন্ধুর কাছে যেত।এভাবে নিজেকে সামলে সামলে ও আজ মানসিক ভাবে স্বাবলম্বী।ওর বাঁচা এখন শুধুই নিজের জন্যে।তবে আজও কী অবসরে স্মৃতিরা কড়া নাড়ে না মনের দরজায়! হ্যাঁ যথেষ্ট জোরেই ধাক্কা দেয়,কিন্তু মানি শিখে গেছে কীভাবে স্মৃতি গুলো অবহেলা করে করে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করা যায়,আর চাইলে মানুষ সব পারে,ও সেটা শিখেছে নিজের জীবন থেকে।
অয়নের বন্ধুত্ব ওকে ভরসা দেয়,ওর সরলতা ওকে মুগ্ধ করে,কিন্তু তারপরও ও না চাইলে অবচেতনে একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলে মানিনী।এত তাড়াতাড়ি আর জড়াতে চায়না ও।কে জানে কয়েকবছর পর অয়নও বদলে যাবে কিনা।সম্পর্কের নাম বদলালে মানুষ বদলে যাওয়া নতুন কিছু না।
আজ প্রথম কোনো অর্ধপরিচিত ছেলের বাইকের পিছনের বসলো ও।কাঁধে হাত রাখা বা কোমর আলতো করে ধরার স্মৃতিটা কিন্তু কোনো জ্বালা ধরাচ্ছে না ওর মনে,উল্টে না চাইতেও ভালোলাগার অনুভূতি ছেড়ে যাচ্ছে।কিন্তু মানি চাইছেনা এগুলোকে পাত্তা দিতে।আজ অয়নের হাতে হাত ঠেকেছে, মনেহল অয়ন অস্বস্তি অনুভব করছে,কিন্তু মানিনী এমন ভাব করেছে যেন কোনো আত্মীয়র হাতে হাত ঠেকে গেছে।উৎসবের সাথে প্রথম প্রেমের এই অনুভূতি গুলো যে আজও বড্ড জীবন্ত ওর কাছে।প্রথম হাতে হাত বা ঠোঁটে ঠোঁট কী এত সহজে ভোলার?চার বছরের সম্পর্কে খারাপ লাগার থেকেও ভালো লাগার তালিকাটা বড্ড বড়।উৎসব একটু সেকেলে টাইপের তাই শরীরে শরীর ঠেকার অভিজ্ঞতা নেই একদমই,ঠোঁটে ঠোঁটও ঠেকেছে হাতে গুনেই কিন্তু আজও রাতের অন্ধকারে বা অলস দুপুরে মানিনী এই স্মৃতি গুলোই রোমন্থন করে তৃপ্ত হয়।
তবে অয়নের কাছে ও একটা ভরসা পায়,যেটা ওর নিজের বাবা ছাড়া আর কারোর কাছে কখনও পায়নি।সেটা সেই প্রথমদিন থেকে,ট্রেনের আলাপ থেকেই।
এখনো অয়ন ওকে ওর ব্যক্তিগত বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করেনি,আর ও নিজেও বিশদে কিছু বলেনি।
আজ আরেকটা জিনিস ও খেয়াল করলো অয়ন ওর পছন্দ মত সব খাবার অর্ডার করেছিল,কবে ট্রেনে কথা প্রসঙ্গে বলেছিল ইলিশ মাছ ওর সবচেয়ে প্রিয়,আজ দিল্লি হাটে ওকে জিজ্ঞেস না করেই বললো ইলিশ থালি ট্রিট চাই।আর পিজ্জাও যে চিজ বার্স্ট পছন্দ করে আর টপিংস এ চিকেনের থেকে পনীর বেশি ভালো লাগে সেটাও মনে রেখেছে।আর চকোলাভা কেক…আচ্ছা উৎসব কি চার বছরের সম্পর্কে কখন জানতো চকোলাভা ও কি ভীষণ ভাবে পছন্দ করে!
দূর,আবার ও মনে মনে তুলনা করছে।দুটো সম্পর্ক কি এক না তুলনা করার মতো! অয়ন ওর খুব ভালো বন্ধু,আর উৎসব হয়তো ওর বয়সের কাছাকাছি হয়েও বন্ধু কখনো হয়ে উঠতে পারেনি।
নিজের মনের এলোমেলো ভাবনা গুলোকে সরাতে ফোন হাতে নেয় মানি।ফোনের জ্বলে ওঠা আলো নোটিফিকেশন শো করে অয়ন মেসেজ করেছে।একটা না,বেশ কয়েকটা।
ফোন আনলক করে চোখ রাখে মেসেজে।এসব কী লিখেছে অয়ন! কেন লিখেছে! লেখা গুলো ওর চিন্তার মতোই এলোমেলো,কিন্তু…।
একমনে মেসেজ গুলো পড়তে থাকে ও,আর চোখটা ভিজতে থাকে নিজের অজান্তেই।আবার কি জড়িয়ে যাচ্ছে ও আরেকটা সম্পর্কে,নাকি নিজেকে আটকে সরে আসতে পারবে ও শেষ অবধি? ইচ্ছা আর অনুভূতি একে অপরের সাথে দ্বন্দ্ব শুরু করে দেয় মানিনীর অবচেতন মনে।আর মানিনী ডুবে যায় মেসেজের মধ্যে দিয়ে অয়নের মনের গভীরে।

ক্রমশ..

You may also like

1 comment

Anonymous July 12, 2024 - 12:54 AM

khoob bhalo lagche

Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!