মুখোশের আড়ালে – অন্তিম পর্ব

by Tamali

অন্তিম পর্ব:-


কথায় আছে বিপদ বলে আসেনা,আর বিপদকালে মাথা ঠান্ডা রাখাটাই সব থেকে বড় ব্যাপার।কেউ বিপদ ইচ্ছা করে পাঠালে, তার সাথে একটা স্নায়ুযুদ্ধ চলে।কিন্তু যতই প্ল্যান করে,ছক কষে বিপদ তৈরি হোকনা কেন অপরাধী ফাঁক একটা রাখেই,এখানেই ভগবানের খেলা।       কলেজের গেটের বাইরের  বট গাছটার বাঁধানো বেদিতে এসে বসলো পর্ণা।সুশী পাশে এসে বসতে ওকে বললো, “সুশী,একটা কাজ করবি?শুধু দুটো ইনফরমেশন এনে দিতে পারবি?….অভিযোগকারী মেয়েটার নাম কি আর কি প্রমান দিয়েছে ওই মেয়েটা?”সুশী শুনেও শুনতে না পেয়ে আনমনা হয়ে বলল,”কি লাভ হবে?আমরা দুজন কি করে কি করবো?…এটা এমন একটা অভিযোগ…প্রমান করাটাই চাপ পেছনে সৌরভ সরকাররা আছে।””সুশী এখন সবে দুপুর দুটো, তুই ওটুকু করে দে।যদি মেয়েটাকে চিনে যাই সুবিধে হবে,নাহলে একটু কাঠখড় পোড়াতে হবে।আমার ওপর একটু ভরসা রাখ।হয়তো অনেক কিছু আছে যা আমি তোকেও বলে উঠতে পারিনি।নিজের মধ্যে রেখেছিলাম যাতে সময় আসলে যদি কাজে লাগে।” পর্ণার কথায় সুশী অবাক হয়ে তাকায়।তবে ফাঁকা আওয়াজ দেওয়ার মেয়ে ও তো নয়।সেই প্রাইমারি স্কুল থেকে দেখছে,অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদ করে,আর চেঁচিয়ে নয় যুক্তি দিয়ে ধরাশায়ী করে বিপক্ষকে।তাই আর কথা না বাড়িয়ে জমায়েত ভিড়ের দিকে এগিয়ে যায়..ইউনিয়নের দাদারা নিশ্চই বলতে পারবে। ভিড়ের মাঝে দেখতে পায় অশোকদা কে,ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য,কিন্তু সুশীর সাথে ভালোই আলাপ।কাছে গিয়ে কৌতূহলের সাথে জিজ্ঞেস করে,”আচ্ছা দাদা,মেয়েটা কে কিছু জানো?কলেজের কেউ?” অশোকের থেকে সত্যিই খবর পাওয়া যায়…মেয়েটার নাম মিত্রা, মিত্রা ঘোষ।এই কলেজের কেউ না।কাছেই মুচিপাড়ায়  থাকে, তবে খবরটা কেউ সেরকম জানেনা।আর প্রমান হিসেবে যতদূর জানা গেছে একটা অডিও ক্লিপ দিয়েছে,যেটা নাকি মেয়েটার ফোনে রেকর্ড করেছিল স্যারের বাড়িতে ঘটনাটা ঘটার সময়।এর বেশি আর কিছু জানেনা।স্টাফ রুমে চা দেয় যে রতনদা, পুলিশ এস.এস কে অভিযোগ শোনানোর সময় কাছে ছিল,সেই যেটুকু বলেছে।সুশী খবরটা নিয়ে এসে দিতেই পর্ণা আনমনে হেসে ফেলে।সুশী বলে, “হাসছিস?!!””হ্যাঁ রে।ভাবছি ‘পাপ বাপকেও ছাড়েনা’..”পর্ণার হেঁয়ালি সুশীর মাথার ওপর দিয়ে যায়।পর্ণা আবার মুখ খোলে,”সৌরভ সরকার কলেজের দ্বিতীয় দিন স্টেশনের কাছে ওই কফি শপে আমায় নিয়ে গেছিল,ওখান থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দেখা হয় একটা সাদামাটা মেয়ের সাথে।মেয়েটাই দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসে,সৌরভ এড়িয়ে গেলেও আলাপ করিয়ে দেয় আমার সাথে শুধু নাম বলে।মেয়েটার পোশাকে অভাবের ছাপ ছিল।পরে আমায় বলে,’গরিবের মেয়ে..গান ভালোই করে…সুযোগের জন্যে আমার পিছনে পরে গেছে’,বলে অহংকারী হাসি হাসে।মেয়েটার নাম ছিল মিত্রা,মিত্রা ঘোষ”।হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলে ,”চল,এখানে সেভাবে কিছু না চিনলেও মুচিপাড়ার গলিটা জানি।…স্কুটিটার অভাব খুব বেশি হচ্ছে”। সুশী একটু ভীত মুখেই বলে,”আমরা দুজন যাবো,পাত্তা দেবে কেন?আর মেয়েটা বাড়িতে নাও থাকতে পারে…সৌরভ সরকার সাথে থাকতে পারে…কত কিছুই হতে পারে”। সুশীর কথা শুনে পর্ণা ওর দিকে তাকিয়ে বলল,”সুশী তোকে আমি জোর করবোনা।কিন্তু একা হলেও যেতে আমাকে হবে।এস.এস স্যার আমার জন্যে কি করেছেন আমি ভুলতে পারবোনা।আজ হয়তো বেঁচে আছি ওনার দয়ায়।আর হ্যাঁ, সৌরভ সরকার এধরণের মেয়েকে দরকারে ডেকে পাঠায়,নিজে তার বাড়ি আসেনা।আর মেয়েটা যদি না থাকে অন্তত ফোন নম্বরটা তো জোগাড় হবে”।সুশী আর কথা বাড়ায় না।বলে,”চল”। হঠাৎ পর্ণার নজরে পড়ে ভিড়ের পিছন দিকে ওর বাবাকে।চোখ মুখ কুঁচকে এগিয়ে গিয়ে ডাকে,”বাবা,তুমি কি করতে এসেছ….আমি এখন বাড়ি ফিরবোনা।” হেসে ফেলেন পর্ণার বাবা,”আমি বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে আসেনি রে,তোর সাথে থাকতে এসেছি।..বাবা তো,নিশ্চিন্তে বাড়ি বসে থাকতে পারলামনা”।পর্ণা বাবাকে জড়িয়ে ধরে।   পর্ণার কাছে সব শুনে ওর বাবা বলেন,”এই পুলিশ স্টেশনে যদিও না,কিন্তু পাশের পুলিশ স্টেশনে পরিচিত একজন আছে।দেখি একবার ফোন করে যদি কোনো হেল্প পাওয়া যায়,এই পুলিশ স্টেশনের কারোর সাথে যোগাযোগ করে যদি মিত্রার আড্ড্রেস তা বের করে দেয়।” এরপর আধ ঘন্টা ফোন চালাচালির পর মিত্রার আড্ড্রেস জোগাড় হয়।বাবার বাহনে করে ৫মিনিটে পৌঁছে যায় গন্তব্যে।     শুভঙ্করকে যেন এত বড় ঘটনা ছুঁতেই পারছিলনা,ও যেন জানতো কিছু একটা ঘটবে।শুধু বি.ডি স্যার আর শ্রীময়ী জানে চাঁদিপুর থেকে ফেরার পর থেকে কলেজ ছেড়ে যাওয়ার জন্যে এস.এস এর ওপর অসম্ভব চাপ এসেছে,কিন্তু পর্ণাকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা ও ভাবতেও পারেনি। অভিযোগ শুনে সবার আগে,মায়ের আর ওই মুখটাই মনে ভেসে উঠেছিল।ভাবেনি ওই মেয়েটা নিজের সম্মান,ভবিষ্যৎ না ভেবে ওকে বাঁচাতে ছুটে আসবে।কি করছে,কোথায় আছে এখন এই চিন্তাটাই মাথায় ঘুরছে।পর্ণার ওই একগুঁয়ে মুখটা তার মনে চিন্তার একমাত্র কারণ হয়ে উঠেছে।ওর জন্যে শ্রী গেছে উকিলের কাছে,দেখা যাক আজ বেল পাওয়া যায় কিনা।নাহলে কি হবে শুভঙ্কর ভাবেনি,ভাবতে পাড়ছেও না।এদিকে বিকেল ৪টের পর পুলিশ অফিসার চাপ সৃষ্টি করে কলেজ কর্তৃপক্ষের ওপর ,সরকারি কাজে সহায়তা না করার অভিযোগ আনে।বাধ্য হয়ে পিছনের গেটে দিয়ে বের করে দিতে হয়।শুভঙ্করকে হ্যান্ডকাপ পড়াতে দেয়নি কলেজ ম্যানেজমেন্ট আর এটাও বলে শুভঙ্করের মতো টিচারের বিরুদ্ধে এইসব মিথ্যে অভিযোগ তাঁরা মানেন না।তাই এই মিশনারি কলেজের চাকরি নিয়ে তিনি যেন নিশ্চিন্ত থাকেন।   মিত্রা নিজে এসে দরজা খোলে,পরণে সস্তা ছিটের একটা সালোয়ার।পর্ণার বাবা সাথে আসেননি,দূরে দাঁড়িয়ে ওদের নজরে রাখচ্ছেন।পর্ণাই বারণ করে…যে ধরণের আলোচনা হবে তাতে বাবা না থাকলে ভালো।পর্ণা কে দেখে প্রথমে চিনতে না পারলেও ‘চেনা চেনা যেন’ মুখভঙ্গি ফুটে ওঠে মিত্রার মুখে।পর্ণা নিজেই বলে,”মিত্রাদি চিনতে পারছো না?আমি পর্ণা,সেই কফি শপের সামনে….সৌরভ দার সাথে…”,মিত্রার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।পর্ণা আর সুশীকে বলে,”হ্যাঁ, হ্যাঁ মনে পড়েছে..তারপর বলো তুমি আমার বাড়ি?”পর্ণা একটু ইতস্তত করে বলে,”ভেতরে গিয়ে কথা বললে অসুবিধা আছে?আসলে একটু দরকার ছিল।” মিত্রা একটু অবাকই হয়,ওর কাছে কিসের দরকার ভাবতে থাকে।কিন্তু বাধ্য হয়েই ভেতরে ঢুকতে দেয়।ছোট এক কামরার একটা ঘর।পাশে আর একটা ছোট ঘর,হয়তো ওখানে ওর মা আছে।”আমাকে তো চেন,আর ও হলো সুস্মিতা..বিশেষ দরকারে এসেছি আমরা।তোমার সাহায্য চাই”।পর্ণার কথায় চোখে মুখে প্রশ্ন নিয়ে তাকায়,”হ্যাঁ বলো”। পর্ণা কোনো রকম উল্টোপাল্টা না বকে, স্মার্টলি বলে,”তারপর সৌরভদা কোনো কাজের অফার কিছু দিলো তোমায়।নাকি,সুযোগ দেবে বলে এখনো ঘোরাচ্ছে?”নিমেষে রক্তবর্ণ হয়ে যায় মিত্রার মুখ।সুশীর তো ভয় হাত পা ঘামতে শুরু করে দিয়েছে।দাঁতে দাঁত চিপে মিত্রা বলে,”কি বলতে চাইছো কি তুমি?””না মানে যেদিন আমার সাথে তোমার আলাপ করায়, তুমি চলে যেতেই আমায় বলে কাজের জন্য তুমি নাকি ওর পিছনে পরে আছো।এমনকি ওকে সব রকম এন্টারটেইন করতেও তোমার আপত্তি নেই।কিন্তু সৌরভদা তোমায় পাত্তাও দেয়না।তাই জিজ্ঞেস করলাম।যাইহোক কাজের কথায় আসি।”   পর্ণার সোজাসাপ্টা কথায় মিত্রা এমনি একটু কুঁকড়ে যায়।পর্ণা ঠিক করেই এসেছিল প্রথম থেকে আক্রমণ করে ঝাঁঝরা করে দেবে..প্রথম দেখাতেই বুঝেছিল মেয়েটা খুব একটা স্মার্ট না,তবে বোকাও না।পর্ণা ব্যাগ খুলে বের করে একটা ফোন, দামি স্মার্ট ফোন।মিত্রাকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে,”এই ফোনটা আগে দেখেছো?”মিত্রা পুজোর পর থেকে সৌরভের অন্যতম শয্যা সঙ্গীনি।বেশিদিন যদিও সৌরভের কাউকে ভালো লাগেনা।আর পর্ণাকে যাই বলুক চাঁদিপুর হোটেলের রুমে,আসলে কোন বড়লোকের মেয়েকে ও এসব ব্যাপারে ঘাঁটায়না।গরীব আর মধ্যবিত্ত মেয়েরাই ওর টার্গেট,যাতে বেশি ঝামেলায় জড়াতে না হয় কেটে ফেলার সময়।মিত্রা তাই সহজেই ফোন টা চিনতে পারে।”এটা তো সৌরভের পুরোনো ফোন।চাঁদিপুর এক্সকারশনে গিয়ে চান করার সময় সমুদ্রে পরে যায়।ও আর খুঁজে পায়নি।”পর্ণা হাসে,বলে,”হমম,সমুদ্রে পরে গেছিলোই বটে!আচ্ছা মিত্রাদি, তোমাকে কি সৌরভদা কখনো প্রপোজ করেছে?..আমি জানি তোমার ফিনান্সিয়াল অবস্থা।এটাও জানি তুমি চাইলে এখুনি আমাদের বের করে দিতে পারো এরকম প্রশ্ন করার জন্যে,কিন্তু তুমি যেমন এক গরিব মার একমাত্র সন্তান,তেমনি এক মায়ের সন্তানকে বাঁচাতে আমি তোমার কাছে এসেছি।সেই মাও না খেয়ে,দাঁতে দাঁত চিপে লড়াই করে তাঁর ছেলেকে মানুষ করে আজ সবে একটু সুখের মুখ দেখেছেন।আমি জানি তুমি আমাদের কথা না বুঝলেও তাঁরটা বুঝবে।”পর্ণা একটু থামতে মিত্রা বলে,”তুমি কি বলতে চাইছো আমি কিছুই মাথা মুন্ডু বুঝতে পারছিনা।আমার মা অসুস্থ,অপরেশন হয়েছে কদিন আগে।আমি আর তোমাদের সময় দিতে পারবোনা”।বলে মিত্রা উঠে দাঁড়ায়।তখনই পর্ণা ফোনের ‘অডিও রেকর্ড’ ফাইল থেকে একটা কল রেকর্ড চালায়।সৌরভের গলা ভেসে উঠে, অটোমেটিক কল রেকর্ডার অন থাকায় রেকর্ড হওয়া কলের অংশ বিশেষ।”আরে যে জন্যে এই ফালতু জায়গায় এসে বসে আছি আজ দুদিন ধরে সেই সুযোগ টাই পাচ্ছিনা।শালা মেয়েটাকে যেন সবাই মিলে ঘিরে রেখেছে।একটা সুযোগ পাই,ওই পর্ণা শালির জীবন নরক বানিয়ে দেব।শালা সৌরভ সরকার কে লেভেল দেখাচ্ছে?আমায় রিজেক্ট করার সাহস ওই পাতি মেয়েটা পায় কিকরে দেখবো।জানিস ওই মেয়েটা গানও জানে,আজ সন্ধ্যে বেলা গাইলো,আমায় বলেছিল গানের ‘গ’ জানিনা।শালা ওকে তো আমি দেখে নেব,আর হ্যাঁ এর হয়তো ভিডিও করতে পারবোনা,কিন্তু অডিও তে করে চিৎকার রেকর্ড করে ঠিক নিয়ে যাবো….হাহাহা।”অপর দিকের জন বলে,”কিন্তু গুরু শেষের ভিডিওটা খাসা ছিল,কে ছিল মালটা?””ভালো ছিলোনা?!!আরে ওটা এক লোকাল গায়িকা, মিত্রা নাম,প্লেব্যাক এর সুযোগ করে দেওয়ার নাম করে তুলেছি।প্রথমে বিশাল ছুটমার্গ ছিল,এই শালা পর্ণার মতো।এখন একদম হাতের মুঠোয়।ওকে একটু বেশিই ভালো লেগেছে আমার।এখন মাস কয়েক ওকেই রাখবো।হাহাহা।…..”পর্ণা রেকর্ডটা অফ করে দেয়।মিত্রা ততক্ষনে রাগে ক্ষোভে ঘেন্নায় ভেঙে পড়েছে।পর্ণা ওকে সামলানোর সুযোগ দেয়।এবার মুখ খোলে সুশী।অবাক গলায় বলে,” তুই এটা কোথায় পেলি?”পর্ণা সুশীর দিকে তাকায়,”বললাম না তোকে ‘পাপ বাপকেও ছাড়েনা’।চাঁদিপুর হোটেলে আমাদের ঘরে ঢুকে সৌরভ সরকার অডিও রেকর্ডার অন করে ফোনটা ট্রাউসারের পকেটে রাখে।আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় হয়তো পকেট থেকে বেরিয়ে এসেছিল,বা তখনই মেঝের কার্পেটের ওপর পরে যায়।পরে শুভঙ্কর স্যারের সাথে ওর ধস্তাধস্তির সময় ওটা বক্স খাটের নিচে ঢুকে যায়।…পরের দিন শুভঙ্কর স্যার আমাদের ঘরে সকালে এসে রেডি হয়ে নেয়ার কথা বলে চলে যাওয়ার পর তুই ওয়াশ রুমে ঢুকিস,তখন সৌরভের ব্যাচমেট অতনু আসে ,অনুরোধ করে একবার ঘরটা খুঁজতে দিতে,ওতে সৌরভের নাকি কিছু ইম্পরট্যান্ট গান আছে,যেগুলো ফিরে রেকর্ড করতে হবে।সৌরভকে নজরবন্দি করে রাখা আছে বলে ওর বন্ধু এসেছে।খুব ভালো ভালো কথা বলে আমায়,আগেরদিনের ঘটনার জন্য খুব লজ্জাও জানায়।কিন্তু আমি ভয় দেখাই চেঁচানোর,বলি কোনো ফোন নেইও এখানে,অন্য কোথাও দেখো।শেষে রণে ভঙ্গ দিয়ে পালায়।”সুশী শুধু না মিত্রাও কান্না থামিয়ে শুনতে থাকে।পর্ণা আবার বলে,”ওদের ভাগিয়ে একটু খোঁজাখুঁজি করতে ফোনটা পেয়ে যাই।সারারাতে চার্জ ফুরিয়ে অফ হয়ে গেছিল।বাড়ি এসে প্রথম দুদিন মনেও ছিলোনা।তারপর মনে পড়তে চার্জ দিয়ে অন করি।কিন্তু লক খুলতে পারিনি।আমার মামাতো ভাই রজত, মোবাইলের ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড বলে মামা দোকান করে দিয়েছে,ওর কাছে নিয়ে যাই দুদিন পর।ভয় করছিল যদি গুগল একাউন্ট দিয়ে শয়তানটা ফোনটা লক করে দেয়।কিন্তু না,এই মডেলটা বেশ কয়েকবছর আগের বলে শুধু সিমটা ব্লক করেছিল।….এতে আমাদের রুমে ঢোকার পর ওর কাজের নমুনাও রেকর্ড আছে।…কাউকে বলিনি,রেখে দিয়েছিলাম,যদি পরে ও কোনো ঝামেলা করে, এটা কাজে আসবে ভেবে।”এবার মিত্রার দিকে ফেরে,”মিত্রাদি ওই শয়তানটা কোনো মেয়েকে সম্মান দেয়না।আজ ও তোমাকে ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলার আগে শুভঙ্কর স্যারের সাথে শত্রুতার হিসেব মেটানোর জন্যও ব্যবহার করছে।কি আমি ভুল বললাম?”চমকে ওঠে মিত্রা,”কে শুভঙ্কর স্যার?আমি চিনিনা”।মিত্রার কথায় পর্ণা বলে,”আমি জানি তুমি চেনোনা।তাও সৌরভ সরকারের নির্দেশে মলেস্টেশন-এর অভিযোগ এনেছ ওই ভগবান তুল্য মানুষটার নামে,ওনার সম্বন্ধেই প্রথমে বলেছিলাম,অনেক কষ্ট করে আজ এই সম্মানের জায়গায় পৌঁছেছেন।…সৌরভ সরকারের এই কাজ উদ্ধার হয়ে গেলে ও তোমায় ছুঁড়ে ফেলে দিতে ৫মিনিট ও ভাববেনা।কিন্তু তুমি আমাদের সাহায্য করলে,সত্যের সাথ দিলে আমরা তোমারও সাথ দেব।…তোমার ঐ ভিডিওগুলো কোনো পর্ন সাইটে চড়া দামে বেচে দেবে ওই নরকের কিটটা।তুমি এই রেকর্ড টার সাহায্যে আইনী স্টেপ নিলে আমরা সাহায্য করবো।…যে মানুষটাকে তুমি ফাঁসিয়েছ,সে সবার আগে হয়তো তোমার পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু এসব তখনই হবে যদি তুমি এই মিথ্যে অভিযোগ তুলে নাও।”এবার সুশী পর্ণার প্ল্যান বুঝতে পারে।পর্ণার বদলে ও বলে,”ওই সৌরভ আমার বন্ধুর ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিল সেটা তো শুনলে,বাঁচিয়েছিলেন আমাদের ওই শুভঙ্কর স্যার।সৌরভ কে মেরেওছিলেন খুব,সেই রাগে ও এটা করেছে তোমার সাহায্যে।যদিও খুব কমজোরি কেস,কোর্টে গেলে তুমিই হেরে যাবে,তোমার বদনাম হবে।সেটাই হয়তো কাজে লাগিয়ে সৌরভ তোমায় ‘টাটা-বাই বাই’ করবে।আর স্যার কে হ্যারাস করে,জেলে রেখেই ওর প্রতিহিংসা পরায়ণ মন শান্তি পাবে।কিন্তু  আমরা চাইছি আজকেই স্যারকে বের করে আনতে।”   এবার মিত্রা বলতে শুরু করে, “দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন ও আমায় ওদের ক্লাবে ডাকে।অনেক ভালো ভালো কথা বলে শেষে একটা গান গাইতে বলে।বাবা বেঁচে থাকতে ক্লাসিক্যাল শিখেছিলাম বছর খানেক,গলা মন্দ না।সৌরভ আর ওর ব্যান্ডের সবাই ভূয়সী প্রশংসা করে।আমার সামনে বসেই সৌরভ একজনকে ফোন করে মিউজিক ডিরেক্টর বলে,আমিও মুগ্ধ হই।সেই থেকে আজ ছমাস ঘোরাচ্ছে।একদিন ওদের গেস্ট হাউসে ডাকে,মার শরীর খারাপ বলে কান্নাকাটি করে,আমিও ইমোশনাল হয়ে যাই।সেইদিন থেকে শুরু হয় শরীরের খেলা।আমার সংসারে অভাব অনেকটা কমে।শেষে মায়ের অপরেশনের সময় টাকা দেয়ার আগে তোমাদের ওই স্যারের কথা বলে।”পর্ণা উত্তেজিত হয়ে যায়,”তোমায় এক্সাক্ট কি বলেছিল?””আমায় উল্টো কথা বলেছিল।স্যারকে ও হাতেনাতে ধরে একটা মেয়েকে মলেস্ট করতে,কিন্তু স্যার ধরা পড়ে উল্টে ওকে মারে,কলেজ ছাড়া করার ভয় দেখায়,ওই মেয়েটাকেও ভয় দেখায়।ওই মেয়েটা ওর বোনের মতো,কিন্তু ওই কলেজেই পড়ে বলে কিছু প্রতিবাদ করতে ভয় পাচ্ছে।তাই আমি যদি ওদের হেল্প করি।….যে অডিও ক্লিপ সেটাও নাকি মেয়েটার ফোনেই রেকর্ড।আমার ফোন নিয়ে গিয়ে এস.এস(সৌরভ সরকার) ওটা আমার ফোনে ভরে এনে দেয়।আমার কাজ ছিল শুধু লোকাল থানায় গিয়েও ডাইরি করা,বাকিটা সব ও ঠিক করে দিয়েছিল।”মিত্রার কথা শেষ হতেই সুশী বলে,”স্যারের ভয়েস যদি অডিও তে থাকে তাহলে অডিওটা ভুয়ো, আর ওটা যে নকল সেটা প্রমান করতে কোর্টের এক মিনিট ও লাগবেনা।তখন তোমার বদনাম হবে,সৌরভ সরকার থেকে যাবে আড়ালে।কেসটা একদমই দুর্বল।স্যারকে হ্যারাস করা,কয়েকদিনের জন্যে বদনাম করা আর তোমায় ছুঁড়ে ফেলা দুটোই একসাথে ভেবেছে বাস্টার্ডটা।” শেষের দিকে সুশী উত্তেজিত হয়ে পড়ে।পর্ণা সুশীর কাঁধে হাত দিয়ে শান্ত করে মিত্রাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”তুমি এবার বলো কি করবে?আমাদের ফিরিয়ে দেবে নাকি সাথ দেবে?তোমার কেরিয়ার আমি তৈরি করে দিতে পারবোনা, কিন্তু আমার গুরুজীর কাছে নিয়ে গেলে উনি ঠিক কিছু ব্যবস্থা করবেন,সৌরভের বিরোধিতা করতে যদি চাও তাতেও সাহায্য পাবে,আর এই  মুহূর্তের নিরাপত্তাও আমরা দিতে চেষ্টা করবো।”মিত্রা অসহায় গলায় বলে,”পুলিশ কারণ জিজ্ঞেস করলে হয় আমায় নিজেকে ছোট করতে হবে,নাহলে সৌরভের কথা বলতে হবে।আমি সৌরভের নাম নিলে ও আরো ক্ষেপে যাবে,আর এই মুহূর্তে অসুস্থ মাকে নিয়ে লড়ার ক্ষমতা নেই।তোমরাই বলো আমি কি করবো?”পর্ণা চিন্তিত ভাবে বলে,”সেটাই ভাবছিলাম…তবে কারণ জিজ্ঞেস করবে কিনা জানিনা।যদি করে নিশ্চই আন অফিসিয়ালি করবে।তুমি আগে বলো তুমি যেতে রাজি কিনা?”মিত্রা দৃঢ়তার সাথে বলে,”একজন সৎ উপকারী গরিব মায়ের ছেলেকে ফাঁসিয়ে আমার তো কোনো লাভ নেই।বরং জীবনে পাপের বোঝা বাড়বে।তোমরা বসো, আমি চেঞ্জ করে আসছি”।…         অফিসারের কি মনে হওয়ায় আপাতত এস.এস কে সিঙ্গেল একটা সেল দিয়েছে।অন্তত ৪দিন থাকতে হবে,কারণ কোর্ট বন্ধ। ফোন জমা নিয়ে নিয়েছে,তার আগে অফিসারকে অনুরোধ করায় মা কে ফোন করতে দিয়েছিল একবার,আগেই মা কে বলেছিল,কিন্তু থানায় নিয়ে চলে এসেছে সেটা জানালো। মা খুব কাঁদছিলো,কোনোদিনও এতদিন ধরে মা একা থাকেনি,জানেনা শুভঙ্কর কি হবে।শ্রী কলেজে থাকতে ফোনে বলেছিল সময় পেরিয়ে যাওয়ায় আজ কোর্টে বেল করানো যায়নি।পর্ণা বা শ্রী কেউ এলে মা’র খবর রাখার জন্যে অনুরোধ করবে।পর্ণার কথায় মনে পড়লো,কোথায় আছে কে জানে!ওর বাড়ির নম্বরটা শুধু আছে,কিন্তু ফোন করতে গিয়েও করেনি।পাগলী মেয়েটা হয়তো এখনো কাঁদছে।শুভঙ্কর এসব ভাবতে ভাবতে ঘড়িতে কটা বাজে দেখতে গিয়ে চমকে ওঠে।পর্ণা,সুশী,পর্ণার বাবা,আর সাথে একটা মেয়ে থানার দরজা ঠেলে ঢুকছে।শুভঙ্কর মাটি ছেড়ে সেলের গ্রিলের কাছে যায়।তখনই পর্ণা দেখতে পায়, ওর চোখটা জলে ভরে ওঠে স্যারকে এভাবে দেখে।এগিয়ে যায় ওরা অফিসারের দিকে।কি চায় কি মেয়েটা?এত রাতে থানার মতো জায়গায় এসেছে,ওর বাবাই বা কিকরে নিয়ে এলেন?! এত কিছু ভাবতে ভাবতে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে ও।  সব শুনে  মিত্রার দিকে তাকিয়ে অফিসার বলেন,”শুধু একটা কথা ভয় পেয়ে বা টাকার লোভে কেস উইথড্র করতে চাইছো নাতো?তোমার অভিযোগের কারণে আজ আমাদেরও সারাদিন প্রায় নষ্ট হয়েছে,আমি লাঠি চার্জ জাতীয় কিছু না করে কলেজে অপেক্ষা করেছি শুধু শান্তি বজায় রাখব বলে।তারপর তুমি এসে কেস তুলতে চাইছো।কারণটা জানতে পারি কি?” মিত্রাই উত্তর দেয়,”টাকার জন্যে ওনাকে ফাঁসাই, কিন্তু ওনাকে কোনোদিন চোখেও দেখিনি।এখন দেখে বুঝছি যে কত বড় ভুল করছিলাম।আমি সত্যি কারণ টা বলতে পারবোনা।শুধু বলি একটা কথা ‘অভাব’,সেটাই বড় কারণ।সারাদিনে অফিসার শুভঙ্কর সেন কে যেটুকু জেনেছেন উনিও বুঝতে পেরেছিলেন মিথ্যে কেসে ফাঁসানো হয়েছে,আর দুপুরে এই মেয়েদুটো ঝামেলা করার পর তার অভিজ্ঞতা বুঝেছিল মেয়েটার সম্মান বাঁচাতেই উনি মুখ খুলছেন না।আর বেশি কথা উনি বাড়ান না।এমনকি যে উপরওয়ালার নির্দেশে সব কাজ হচ্ছিল,তাকেও না জানিয়ে মিত্রার আবেদন মঞ্জুর করেন।কেস ডিসমিস হয়ে যায়।একজন কনস্টেবল গিয়ে সেল খুলে এস.এস (শুভঙ্কর সেন)কে যখন বাইরে আনে ওনার চোখে মুখে তখন অবিশ্বাসের বিস্ময়।এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছেন পর্ণার দিকে, মেয়েটা কি জাদু জানে!একে উনি বাচ্ছা মেয়ে ভেবেছিলেন এতদিন!এটাও বুঝলেন এটাই  সেই মিত্রা ঘোষ।স্বভাব কঠিন এস.এস মেনে নিয়েছিলেন ভাগ্যকে।ভেবেছিলেন চারদিন পচতে হবে এই আধা অন্ধকার কুঠুরিতে।সৎ থেকেও লোকের কাছে বদনাম কুড়োতে হবে আজীবন,লোকে ভাববে,’যা রটে তার কিছুটা তো বটে’… এই মেয়েটা,শুধুমাত্র এই মেয়েটার জেদ সব খারাপ এক নিমেষে উড়িয়ে দিলো।এই মেয়েটা তার জন্যে এতটা করবে ,এতটা পাগলামি…সত্যি শুভঙ্কর ভাবেনি।মন চায় ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু সংযত করেন,এগিয়ে গিয়ে পর্ণার হাত টা হাতে নিয়ে শুধু বলেন,”থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ।”আর বেশি কিছু কথা মুখ দিয়ে বেরোয়না।কিছু সজল চোখ পর্ণার চোখে অনেক অনেক কিছু বলে যায়।নিজেকে সামলে এস.এস সুশী আর মিত্রা কেও ধন্যবাদ জানিয়ে পর্ণার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,”কাল সকালে আপনার বাড়ি একবার গেলে আপত্তি নেই তো?”
    সকাল বেলা কলিং বেলের আওয়াজে পর্ণার ঘুম ভাঙে,ফোনে দেখে আটটা বাজে।অবাক হয়ে যায়,পুজো বাড়িতে মা ডাকেনি কেন তাকে?!নিশ্চই ঠাকুর মশাই এসে গেলেন।তাড়াতাড়ি উঠে বাথরুমে ছোটে।   কাল মিত্রা আর ওর মাকে ওদের নিজেদের ঘরে রেখে আসার রিস্ক পর্ণারা নেয়নি,স্যারের সাথে গিয়ে শ্রীময়ী ম্যাম এর ফ্ল্যাটে ওদের পৌঁছে সুশীকে বাড়ি ছেড়ে ফিরতে মেয়ে বাবার একটু রাতই হয়।তারপর উদ্বিগ্ন মাকে যতটা সম্ভব সব বলে শুতে শুতে মাঝ রাত হয়ে গেছিল।তার ওপর আগের দিনের শারীরিক, মানসিক ক্লান্তি সব মিলিয়ে ঘুম ভাঙেনি আলার্মের আওয়াজে।  পায়েলের দরজা ধাক্কানীতে পর্ণা সাড়া দিলে শুনতে পায় মা বলছে ওর সাথে দেখা করতে কেউ এসেছে।এত সকালে কে আবার….আররে আজ স্যার ওদের বাড়ি আসবেন বলেছিলেন তো?উত্তেজনায় বুক ধক ধক করতে থাকে।তাড়াতাড়ি ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে রাতের ড্রেস চেঞ্জ করেই ডাইনিং স্পেসে ছোটে,যা ভেবেছে তাই,এস.এস স্যার।ওকে দেখে পাঞ্জাবি পড়া শুভঙ্কর স্যার উঠে দাঁড়িয়ে ওর বাবা মার দিকে তাকিয়ে বলেন,”পর্ণার ঘরে গিয়ে ওর সাথে কথা বলতে পারি একটু?” পর্ণার তো চোখ গোল,শুভঙ্কর স্যারকে দেখেই ওর হৃৎপিন্ড থেমে গেছে,আবার ওর সাথে কথা বলতে চাইছেন একা!মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে মা’র মুখ কি খুশি খুশি,কিন্তু বাবার মুখটা একটু যেন করুন লাগে।মা পর্ণা কে বলে,”যা পর্ণা শুভঙ্করকে নিয়ে গিয়ে কথা বল,আমি চা জলখাবার বানিয়ে ডাকছি,ঠাকুর মশাই সেই ১১টার পর আসবেন।তোরা জলখাবার খেয়ে নে।” পর্ণার হাত পা এমনি কাঁপছে,এস.এস কি বলবে?পায়েল কে বলে,”আমার শুধু চা কোরো”।তারপর শুভঙ্করের দিকে তাকিয়ে বলে ,”আসুন স্যার”।     পর্ণা নিজের ঘরে ঢুকে তাড়াতাড়ি অগোছালো বিছানাটা একটু টেনে ঝেড়ে ঠিকঠাক করে অপ্রস্তুত মুখে বলে,”আজ উঠতে একটু দেরি হয়ে গেছে।আপনি এই চেয়ারে বসুন”। শুভঙ্কর চেয়ারটা সরিয়ে বিছানার একদিকে বসে।”জানো পর্ণা আমার কাল সারারাত ঘুমই হয়নি,ভাবছিলাম কখন সকাল হবে?” পর্ণা অবাক হয়ে তাকায়।শুভঙ্কর আবার বলে,”কলেজে পড়তে একটা মেয়ের কবিতা শুনে তার প্রতি ভালোবাসা জন্মায়,জানতে পেরে গরিব বলে অপমান করে মেয়েটি।তারপর আর সাহিত্য ছাড়া কারোর ওপর অনুরাগ জন্মায়নি।…তোমার প্রথমদিনের ক্লাস মনে আছে?আমার কথায় তোমার চোখে একটা কষ্ট দেখেছিলাম,তোমার বাংলা পড়া নিয়ে অপমানসূচক কথায় তুমি আঘাত পেয়েছিলে।তারপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার মতো তোমারও বাংলার প্রতি ভালোবাসার কথা।…আমি মেডিকেল পেয়ে টাকার অভাবে পড়িনি।”একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে শুভ।পর্ণা চুপ করে শুনতে থাকে স্যারের কথা।”সৌরভ ছেলেটা ভালো নয় জানতাম,কিন্তু সেদিন তোমাদের ওভাবে দেখে কেন অত কষ্ট হয়েছিল সেদিন বুঝিনি,বা বলা ভালো বুঝতে চাইনি।তারপর জানতে পারি তোমার মানসিকতা, সেটাও যেন আমার থেকে ধার করা।…তুমি হয়তো এখন সব জানো।সুশী হয়তো বলেছে।কিন্তু বিশ্বাস করো কালকের আগে অবধি আমি তোমায় বাচ্ছা মেয়ে ভাবতাম।…তোমার চোখে ভালোবাসা দেখেছিলাম,কিন্তু ভেবেছিলাম মোহ।তোমার গান,তোমার চোখ,তোমার হাতের স্পর্শ সব কিছুতে মনে হয়েছিল অল্প বয়সী ছেলেমানুষি।ভেবেছিলাম আমার ভালোবাসার গভীরতা বোঝার বয়স হয়নি,তাই সৌরভের কারণে কে শূন্যস্থান তোমার মনে হয়েছে তার জন্যে আমায় খুঁজছো।হয়তো কোনোদিন সত্যিই কাউকে ভালোবাসলে আমায় ছেড়ে চলে যেতেও ভাববেনা।আমার প্রতি টান তোমার বয়সের ধর্ম,যেটা যেকোনো অল্প বয়সী স্যারের প্রতি তার ছাত্রীদের থাকে।”একটু হেসে বলেন,”অনেক লাভ লেটার পেয়েছি তো কলেজে এসে”…পর্ণার দিকে তাকিয়ে দেখেন ও চুপচাপ মুখ নিচু করে বসে আছে।কিন্তু কথাগুলো শুনে অভিমানে চোখে জল এসে গেছে বোঝেন।এগিয়ে যান ওর দিকে,বক্স জানালায় মাটিতে পা ঠেকিয়ে যেখানে ও বসে ছিল।ওর হাত দুটো ধরেন,কেঁপে ওঠে পর্ণা আর দুফোঁটা চোখের জল এসে শুভঙ্করের হাতে পরে।ওর হাত ছেড়ে শুভ ঘরের দরজায় দিকে এগিয়ে যায়,কি ভেবে শেষ অবধি দরজাটা টেনে বন্ধ করেন।পর্ণা চোখ তুলে তাকায়।”তোমার পারমিশন না নিয়েই দরজাটা একটু বন্ধ করলাম।কারণ এবার যে কথা গুলো বলবো সেগুলো শুধু তোমার জন্যে।” আবার পর্ণার হাত ধরে ওকে ওই চেয়ারটায় বসায় আর নিজে হাঁটু গেড়ে নিচে বসে হাত গুলো রাখে পর্ণার কোলে।”আমি খুব আনাড়ি, আবার বয়সেও তোমার চেয়ে অনেকটাই বড়।তাও একাই এসেছিলাম আজ তোমার বাবা মার কাছে তোমায় বিয়ের কথা বলতে”,চমকে তাকায় পর্ণা,সঙ্গে সঙ্গে লজ্জায় মুখ নামিয়ে নেয়,ওইজন্যে বাবার মুখটা ওরকম লাগলো!”তোমার মা বাবার মত না জেনে তোমায় কিছু বলতে আমি পারতামনা।নিজের মা কেও বলে এসেছি ফিরে গিয়ে তাঁর হবু বৌমার কথা তাকে বলবো।এখন তুমি বলো বুড়ো বড় চলবে?”হেসে ফেলে এবার পর্ণা,”বুড়ো!?হাহা!..কিন্তু শ্রীময়ী ম্যাম?”এস.এস এর অবাক হয়।”হাহা।শ্রী তো আমার বন্ধু,আর ওরা চাঁদিপুরে আমার সেদিনকার রূপ দেখে বুঝে গেছে তুমি আমার কাছে কি?আমি কিন্তু খুব অগোছালো পর্ণা,তোমায় সামলাতে হবে।তবে সব কিছুই তোমার কলেজ শেষের পরীক্ষার পর।আমি চাইনা কলেজে কেউ কিছু জানুক।আমরা দেখা করবো,কথা বলবো সব কলেজের বাইরে।তারপর বিয়েতে নিমন্ত্রণ করে সবাইকে চমকে দেব?”ছেলেমানুষী হাসি ফুটে ওঠে গম্ভীর মানুষটার মুখে।আলতো করে পর্ণাকে জড়িয়ে ধরেন।শুভর হাতের মধ্যে একটু কেঁপে উঠে দুহাতে ও জড়িয়ে ধরে এস.এস কে।”কাল তুমি আমায় অবাক করেছ।এত ম্যাচিউর আর ঠান্ডা মাথার মেয়ে তুমি,আমি কখনো ভাবিনি।কত বড় বিপদটাকে কত ঠান্ডা মাথায় মোকাবিলা করলে।থ্যাংক ইউ সো মাচ পর্ণা।এভাবেই পাশে থেকো।অনেক ছোট থেকে লড়তে লড়তে আজ আর নিজের জন্যে লড়তে ইচ্ছা করেনা।তুমি আমার হয়ে লড়াই করো,আর আমি তোমার হয়ে করবো।দুবছর পর যেন ছেড়ে চলে যেওনা।”শুভর কথা শেষ হতে না হতে পর্ণা আরো গভীর ভাবে আঁকড়ে ধরে শুভকে।”এই পর্ণার জন্ম আপনার হাতে।ভেঙে না পড়তে,লড়াই করতে ,সাহসী হতে আপনি শিখিয়েছেন।চাঁদিপুরের সেই সকালের কথা গুলো আমায় নতুন করে অক্সিজেন জুগিয়েছিল।আমি আপনার মত হতে চাই,সব দিক দিয়ে আপনার উপযুক্ত।কর্মক্ষেত্রেও আপনার উপযুক্ত সঙ্গী।আজ থেকে আমার পড়ার সব দায়িত্ব আপনার।” শেষ কথাটাই পর্ণাকে নিজের থেকে আলাদা করে চোখ পাকিয়ে শুভঙ্কর বলে,”কি পাজি!এই সময়ও স্বার্থের কথা,নিজের কেরিয়ার গুছিয়ে নেয়ার ধান্দা”।দুজনেই হোহো করে হেসে ওঠে।আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেনা এস.এস,দুহাত পর্ণার মুখের দুদিকে দিয়ে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ায় পর্ণার ঠোঁটে,যেন ভুলিয়ে দিতে চায় ওর প্রথম চুম্বনের তিক্ত অভিজ্ঞতাটাকে।হোলির রঙে চারিদিক যেন রঙিন হয়ে ওঠে।সব ভুল বোঝাবুঝির অবসানে শুরু হয় এক নতুন প্রেমের গল্পের…

সমাপ্ত।

You may also like

Leave a Comment

error: Content is protected !!