শেষ থেকে শুরু – অন্তিম ভাগ

by Tamali


“হ্যালো মধুজা?তুমি কি ব্যস্ত আছো?আমার কিছু কথা ছিল তোমার সাথে”।হটাৎ অরিজিৎ এর মা ওকে ফোন করেছে দেখে একটু চমকেই গেছিল মধুজা।একে তো ব্যাংকে আজ মাসের শুরুর দিকের অস্বাভাবিক ভিড়,তার ওপর আবার শাশুড়িমায়ের অসময় ফোন,কি বলবে বুঝতে না পেরে মধু শুধু বলে,”মা আমি আপনাকে রাতে ফোন করছি?”

“বাব্বা!পাঁচ মিনিট কথা বলারও সময় নেই?”রত্না একটু বাঁকা সুরেই উত্তর দেন।

“না মা সত্যি নেই।আজ মাসের পয়লা,প্রচন্ড ভিড়।আমি আপনাকে রাতে ফোন করছি”,মধুজা একটু জোর দিয়েই কথা গুলো বলে।”ঠিক আছে”,বলে ওদিক থেকে ফোন কেটে যায়।মধু বুঝতে পারে শাশুড়িমা রাগ করে ফোন কেটে দিয়েছেন।কিন্তু সত্যি ওর কিছু করার ছিলোনা।ব্যাংকের এই ‘রাশ আওয়ার’এ ফোনে কথা বলা সম্ভব ছিলোনা।ফোন ধরাও এখন বারণ থাকে এমারজেন্সি কল ছাড়া,শুধু উনি বারবার ফোন করছিলেন বলে মধু ধরেছিল।মাথা থেকে এসব ঝেড়ে আবার কাজে মনোনিবেশ করে। একে কাল রাতে বুবকা না থাকায় ভালো ঘুম হয়নি,তার ওপর সকাল সকাল এই ঝামেলা।ও ভেবে পায়না সকাল সন্ধ্যে যখন ও বাড়ি থাকে তখন কেন ফোন গুলো আসেনা?বুবকা কাল সত্যি খুব আনন্দে ছিল ওর বাবার কাছে,এমনিতেও বাবার সাথে বন্ডিং টা ওর প্রথম থেকেই ভালো,বাবা ওর বন্ধু বেশি,সব আবদার বাবার কাছে।বুবকা কে হাসিখুশি দেখে মধুজারও ভালো লাগছিলো।ওর ব্যাংকে অডিট চলছিল তাই বুবকার স্কুলের মিটিং দরকারি বুঝেও ও ছুটি নিতে পারেনি।মনে একটা খারাপ লাগা কাজ করলেও ওর কিছু করার ছিলোনা।তবে বাড়ি ফিরে অরিজিৎ গেছিল শুনে বুবকার কথা ভেবে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিল,কিন্তু ক্লাস টিচার কি বলেছেন সেটা কিকরে জানবে বুঝতে পারছিল না।মাঝে মাঝে খুব অদ্ভুত লাগে ওর, যে দুটো ছেলে মেয়ে নিজের পছন্দ করে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল,এমনকি দেড় মাস আগে অবধি সংসারও করছিলো,আজ তাদের পরস্পরের মধ্যে সাধারণ কথা টুকুও বন্ধ।আসলে কোনোদিন একে অপরের প্রতি কাদা ছোঁড়াছুড়ি করেনি তো,তাই এতটা খারাপ লেগেছে হয়তো।কিন্তু কতদিন?!!!কতদিন এভাবে চলবে?বুবকার মনেও তো চাপ পড়ছে,তাহলে? মধু বুঝতে পারেনা,বুঝতে পারেনা কি করবে?কাল সারারাত একা শুয়ে এসব চিন্তাই মাথায় ঘুরেছে।অন্যদিন বুবকার শোয়া ঠিক করতে করতেই কখন ঘুমিয়ে পড়ে।কাল পুরোনো অনেক কথা মনে পড়ছিল।বুবকা হওয়ার আগের দিন গুলো..জিৎ এর সাথে দার্জিলিং বেড়াতে যাওয়া,বুবকা হওয়ার সময় পেটে থাকতে জিৎ এর আদর যত্ন।মা বাবার মতোই জিৎ ও ওইসময় খুব খেয়াল রেখেছিল ওর।ও আর  বুবকা যখন মায়ের কাছে ছিল এক বছর,নিজের মা কে পরোয়া না করেই জিৎ প্রায়ই ওদের কাছে চলে এসে রাতে থেকে যেত।এত ঘন ঘন শ্বশুরবাড়ি থাকা ওর মা একদম পছন্দ করতেননা।কিন্তু বুবকার দোহাই দিয়ে ও সেসব উড়িয়ে দিত।মধু ওর শাশুরিমা কে একবারই খুশি হতে দেখেছিল যখন বুবকা হয়,আসলে উনি বেশি খাটতে পারেননা তাই দায়িত্ব এড়িয়ে চলেন।এটা ওটা চিন্তা করে শেষ রাতে যখন চোখে ঘুম নামে মধুর তখন স্বপ্নে এসে হানা দেয় জিৎ।যেন জিৎ ওকে কিছুতেই ছেড়ে থাকতে দেবেনা।”এই যে ম্যাডাম একটু তাড়াতাড়ি করুন”,লাইনের পিছন থেকে উড়ে আসা মন্তব্যে সচকিত হয় মধু,হাত চালায় আরো তাড়াতাড়ি।সুখস্মৃতি উড়ে যেতে থাকে মন থেকে।
তখন সাড়ে চারটে বাজে।আজ চাপের জন্যে চারটে অবধি টোকেন দেওয়া হয়েছে।সব কাজ শেষ হতে সাড়ে পাঁচটা বাজবে আজ,বেরোতে বেরোতে ৬টা।কে জানে বুবকা আজ ফিরলো কিনা?মা কে একবার ফোন করবে সেই সময় টুকুও পায়নি।এমন সময় ফোনটা টেবিলে ভাইব্রেট করতে থাকে। তাকিয়ে দেখে জিৎ।হঠাৎ করে কতদিন বাদে ফোনে ‘জিৎ কলিং’ দেখে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় সম্পর্কের শুরুর দিনের মতো,কিন্তু এমনি দুর্ভাগ্য ফোনটা ধরা হয়ে ওঠেনা,অধৈৰ্য্য কাস্টমারদের সামলাতে সামলাতেই ফোন কেটে যায়।আসলে কাঁচের খোপের মধ্যে বসে থাকা ছেলে মেয়ে গুলোও যে মানুষ…তাদের সংসার আছে…জীবন আছে… এটা বোঝেনা অনেকেই।লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর মতো ওদেরও তাড়া আছে এটা অনুভব করতেও পারেনা বেশিরভাগ জন।হতাশায় ডুবেও টাকা পয়সা লেনদেন করতে থাকে মধুজার মতো বাকিরাও।ফোনটা নির্বাক যন্ত্র হয়ে পড়ে থাকে টেবিলের এক কোনে।’ফোনটা ধরলো না’,প্রথমে আবার অভিমানটাই মাথা চাড়া দেয় অরিজিৎ এর,তারপর হঠাৎ মনে পড়ে,’ওহ!আজ তো পয়লা,মাসের শুরু।এই দিনগুলোতে তো মধুর প্রচন্ড চাপ থাকে।এখনো হয়তো ব্যাংকেই আছে।দেখা যাক পরে কল ব্যাক করে কিনা’,টি ব্রেকে বাইরে বেরিয়ে মধুকে ফোন করেছিল অরিজিৎ।বুবকা কে নিয়ে কথা বলা দরকার,নিজেদের অর্থহীন জেদ ওর ভবিৎসতটা নড়বড়ে করে দিচ্ছে,মধুর সাথে কথা বলাটা তাই দরকার।দোষ তো দুপক্ষেরই ছিল…দেড় মাস হলো ওরা আলাদা আছে…কিন্তু এভাবে কতদিন?!না কথা বলতেই হবে।কাল তো মধুই ফোন করেছিল,হয়তো বুবকা বাহানা ছিল।এসব ভাবতে ভাবতে ফোন টা বেজে ওঠে,মধু কল ব্যাক করেছে ভেবে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ‘মা’ ফোন করছে।এই অসময় মার ফোন!একটু চমকে তাড়াতাড়ি ফোন ধরে  জিৎ।
“কি হলো দাদুভাই তোমার প্রিয় নুডলস বানালাম।খাচ্ছনা?খেয়ে নাও সোনা।”মমতা আদরের বুবকা স্কুল থেকে ফিরতে ওর পছন্দের খাবার বানিয়ে খাওয়াতে বসেছে।কিন্তু আজ বুবকার খাওয়ার ইচ্ছাটাই যেন নেই।নুডলস পেলে যার মুখ খুশিতে চকচক করে ওঠে আজ তার খাবার প্রতি কোনই টান নেই।ওর খালি বাবার জন্যে মন কেমন করছে ,কিন্তু কাউকে বলতে ইচ্ছা করছেনা।খালি ভাবছে কাল দিনটা কত ভালো কাটলো,যদি সব কটা দিন ওভাবে কাটতো, আর সঙ্গে মাম্মাম থাকতো,কি ভালোই না হতো।মমতাও বুঝতে পারেন নাতির মন ভালোনা,হয়তো বাবার জন্যে মন খারাপ করছে।উনি এটা সেটা স্কুলের কথা এসব জিজ্ঞেস করে ভোলাতে চান বুবকা কে।কিন্তু ছেলেটা সেই চুপ মেরেই থাকে।হঠাৎ বুবকা জিজ্ঞেস করে,”আচ্ছা দিদুন মা কি আর কোনোদিনও ও বাড়ি যাবেনা?আমার কত্ত খেলনা,সাইকেল সব ওবাড়ি রাখা।আগে ছুটির দিন বাবা মাম্মাম মিলে পার্কে নিয়ে যেত,সাইকেল চাপাত।আর কি ওগুলো হবেনা?”মমতা বুঝতে পারতেন না কি উত্তর দেবেন?মেয়ে যেদিন চলে আসে সেদিনটা সময় দিয়ে পরের দিন মেয়েকে বোঝাতে গেছিলেন,কিন্তু ‘আমি কি তোমাদের বোঝা?’ জাতীয় কথা মমতাকে চুপ করিয়া দেয়।’যে অরিজিৎ কে মধু একসময় নিজে পছন্দ করেছিল,এমনকি শেষবারের জামাই ষষ্টিতেও ওর পুরো নজর ছিল অরির খাওয়ার ওপর সেই মেয়ে কিকরে এতদিন তার স্বামীর খোঁজ না নিয়ে আছে ভগবান জানে।আজকের মেয়েরা বড্ড অধৈৰ্য্য হয়।আমাদের সমাজে স্বামী ছাড়া মেয়ে যে কতটা অসহায় আর নিরাপত্তাহীন তা ওরা উপলব্ধিই করতে পারেনা।সবচেয়ে অসহায় লাগে নিজেদের।একটা ৩৪বছর বয়সী মেয়ের জীবনে মা বাবা একটা সীমার পর আর ঢুকতে পারেনা।তার ব্যক্তিগত জীবন সে না বললে জোর করা যায়না।তাহলে সে ভুল বোঝে।কিন্তু এভাবে কতো দিন এই টানা পোড়েন চালাবে ওরা।আর জিৎ একদিন কি বলেছে,দুজনের এক সপ্তাহের তুমুল ঝগড়া হয়েছে বলে আগের ১০বছর মিথ্যে হয়ে যায়?আবার একবার মধুর সাথে কথা বলতে হবে,বোঝাতে হবে।মা বাবার কাছে মেয়ে কখনো বোঝা হয়না,কিন্তু মেয়ে অসুখী থাকলে কোনো মা বাবাই চুপ থাকতে পারেনা।অন্য কোনো সমস্যা হলে,যা সত্যি মানানো সম্ভব নয় সেটা আলাদা হতো।কিন্তু স্বামী স্ত্রীর সাধারণ ঝগড়া আর বাড়তে দেওয়া ঠিক না।’
ফিরে থেকে জিৎ এর নম্বরে বার দুই ফোন করেছে মধু..প্রতিবার ই ব্যস্ত।’আবার ভুল বুঝলো?!ও তো জানে আজ মাসের পয়লা। থাকগে আগে ওর মা কে ফোনটা করে নিই।৮টার পর আবার ফোন বন্ধ করে দেন উনি।হমম রিং হচ্ছে’।”হ্যাঁ মা বলুন কি জন্যে ফোন করেছিলেন?”মধুজা শাশুরিমার ‘হ্যালো’ শুনে বলে।”কেন এত বছর পর ফোন করেছি বুঝতে পারোনি?”প্রথম থেকেই তেতো গলায় কথা শুরু করেন রত্না।কিছুক্ষন থেমে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে মধুজা বলে,”হমম অনুমান করেছি,কিন্তু আপনি কি বলতে চান বুঝতে পারিনি”।”আমি বলতে চাই তোমার এত দম্ভ কিসের?বাড়ির বউ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছ দেড় মাস হতে চললো।একে তো বেরিয়ে আসাটাই ভুল ছিল।পড়তে আমার স্বামী শ্বশুরের পাল্লায় তোমার এত তেজ বের করে দিত।আর কোনোদিনও ফিরিয়ে নিয়ে যেতনা।তোমার শ্বশুর শুনে থেকেই তো এই কথা বলছে।আমি বুঝিয়ে রেখেছি।…আর হ্যাঁ কি আক্কেল তোমার মা বাবার?সংসার ভেঙে বেরিয়ে আসা মেয়েকে মাথায় তুলে রেখে দিয়েছে।সেদিন ওতো করে করে বললাম তাতেও কোনো হেলদোল নেই।”একটানা বলে রত্না যখন থামলেন মধু বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে,শুধু একটাই খটকা…’মা বাবাকে ফোন করেছিলেন আবার কবে?ওকে তো কিছু বলেনি ওরা’।যাইহোক কি বলবে এই মহিলাকে ও ভেবে পায়না।তাও মাথা ঠান্ডা রেখে বলে,”আচ্ছা মা আমার ভুল আমি মানছি, কিন্তু আপনার ছেলেও তো আমায় আটকায়নি।দেড় মাসে খোঁজ অবধি নেয়নি একটা।আর আমাকে ওই কদিন যা বলেছিল উঁচু নিচু কথা…অফিস থেকে ফিরেই কোনো না কোনো বাহানায় ওই কদিন রোজ ঝগড়া করেছে,বুবকার সামনে মনে যা এসেছে বলেছে।…দিনদিন একটা তিক্ত সম্পর্ক আমি বইতে পারছিলামনা বলে চলে এসেছিলাম মা বাবার কাছে,ওরা আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিল,চেষ্টা করেছিইল জিৎ কে ফোনে ধরতে…কিন্তু ওই মুহূর্তে কিছু বোঝার অবস্থায় আমি ছিলাম না,মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলাম।কদিনের দূরত্ব দুজনেরই দরকার ছিল।কিন্তু জিৎ ও আর খবর নেয়নি বলে আমিও ডিসটার্ব করিনি।”মধুজা নিজের মতো করে বোঝাতে চেষ্টা করে কিন্তু এত সহজে হয়তো ওর শাশুরিমা ওকে কোনোদিনই বুঝবেন না।”ঝগড়া কোন স্বামী স্ত্রীর মধ্যে হয়না।তাই বলে সংসার ফেলে বেরিয়ে আসা?তারওপর আবার আমার ছেলে খোঁজ নেয়নি বলে ওর ওপর দায় চাপাচ্ছো?ও বলেছিল বেড়িয়ে যেতে?চাকরি করা মেয়ে বিয়ে করতে ওই জন্যে বারণ করেছিলাম।টাকার গরমে স্বামীকে কোনোদিনও সম্মান দেবেনা।আর পরিবার,সংস্কার এগুলোও একটা ব্যাপার।আমার মেয়ে হলে বোঝানো দূরের কথা ঘাড় ধরে তখনই আবার শ্বশুর ঘরে রেখে আসতাম।যে মেয়ে, ছেলেকে বাপ মার থেকে দূরে নিয়ে যেতে পারে সে নিজের আঁতে ঘা লাগলে সেই স্বামীকেও ছেড়ে দেবে সেটাই স্বাভাবিক।নাহলে জাত দেখে বিয়ে দিতে বলে কেন?….”রত্নার মুখে যেন বাঁধ ভেঙে গেছে।এতদিন ছেলের আড়ালে থাকা বৌমা কে যেসব কথা বলতে না পেরে মনে মনে গজড়াতেন আজ সুযোগ পেয়ে সেইসব বিষ উগড়ে দিতে চাইছেন।কিন্তু না এতক্ষন ধরে চুপ করে থেকে নিজের বাবা মা, সংস্কার,জাত সব কিছু নিয়ে মন্তব্য শুনতে শুনতে একসময় মধু ধৈর্যের বাঁধ রাখতে পারেনা।১০বছরের জমানো ক্ষোভ উগড়ে দেয়,সারাদিনের খাটুনি এমনিতেই চিন্তাশক্তি কমিয়ে দিয়েছিল তার ওপর এনার এইসব উল্টোপাল্টা অভিযোগে মাথায় আগুন জ্বলে যায়।ওর মুখের আগোল ও খুলে যায়,বেরিয়ে আসে এতদিনের জমানো ক্ষোভ,অভাব অভিযোগ।”আচ্ছা মা বিয়ের আগে আপনার ছেলে তো মেসে থাকতো?কেন বলুনতো?তখন তো আমি ছিলামনা,তাহলে দূরে থাকত কেন?এবার বলুন,…”,মধু কে থামিয়ে দেয় রত্না চিৎকার করে।”কি বলতে চাইছো তুমি?বিয়ের আগে আর পরে এক হলো?আর ও যাতায়াত করতে পারতোনা তাই কলকাতায় থাকতো।…”এবার কথা শেষ করতে দেয়না মধু,”তার মানে আপনি বলতে চাইছেন বিয়ের পর যাতায়াত করতে শিখে গেছিল?…হাহ!আপনি নিজেও জানেন না আপনি কি বলছেন?”আবার দম নিয়ে বলে,”আপনি বলছিলেন না আপনার মেয়ে থাকলে কি করতেন?কাস আপনার একটা মেয়ে থাকতো,তাহলে নিজের ছেলের চেয়েও ছোট মেয়েটাকে এসব বলার আগে দুবার ভাবতেন।আপনি আমার ছেলের কতটা দায়িত্ব নিয়েছিলেন মা?এমনকি আয়া রেখেও আমার ওই বছর একাধিক ‘লিভ উইথ আউট পে’ হয়েছিল।অর্ধেকদিন আমি না খেয়ে বেরতাম,আপনি ফিরেও দেখতেন না,অথচ রাতে রুটি করার লোক রেখেছিলাম নিজে রুটি না করে তাই নিয়ে আপনার আক্ষেপের সীমা ছিলোনা।…হ্যাঁ আমি নিচু জাত আপনাদের থেকে তাই হয়তো ঠাকুর ঘরে ঢুকতে দিতেন না?আমার মা বাবা কে খেতেও বলতেন না।খেলেও যতই আগে প্লেট থেকে অতিরিক্ত খাবার তুলে দিক সব জলে দিয়ে দিতেন?বাহ একটা নতুন কথা আজ জানলাম,যা অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিল।…ঠিক আছে মা আপনি থাকুন আপনার চিন্তা ভাবনা নিয়ে,এই ছোট জাতের মেয়েটা আর আপনার মানসিক শান্তি বিঘ্নিত করবে না।জানিনা আমার মা-বাবাকে কি অপমান করেছেন,কিন্তু আপনার মত দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া মানুষজন ই দায়িত্ব নিয়ে গলা ফাটায়।আমার আপনার প্রতি কোনো অভিযোগ নেই।শুধু ভেবে দেখবেন বুবকা হওয়ার পর আমি কিভাবে দুদিক সামলাচ্ছি।আমি মেয়ের হওয়ার আগেও একটা মানুষ,কোনদিন বুঝবেন সেটা আপনারা?আপনিও তো একজন মেয়ে,আপনি জানেন না সংসারে কত কাজ থাকে?সকাল ৫টায় উঠে রাত ১২টায় শুতে গেলে কারোর আর ক্লান্তি ছাড়া কিছু আসেনা,এমনকি কথা বলার ক্ষমতাও থাকেনা।আপনার ছেলে আজ ১০বছর পর আমার প্রতি অভিযোগ করেছে তার প্রতি উদাসীনতার।আমার প্রতি বিয়ের পর থেকে কে কত নজর দিয়েছে বলুন তো?আমিও তো আপনার পরিবারের একজন হয়ে গেছিলাম।ছেলের বউ ছাড়া আমার আলাদা অস্তিত্ব নিয়ে কোনোদিনও ভেবেছেন?”এতটা বলে মধুজা দম নেয়,আর কিছুটা আশ্চর্য্য হয়ে যায় তার শাশুড়ি চুপচাপ সব শুনছে দেখে।”আমি তো বিয়ের আগে থেকে একটা চাকরি করি, আর ব্যাংকের চাকরি পরীক্ষা দিয়ে রীতিমতো পড়াশোনা করেই পেয়েছি।আজ ছাড়লে কাল আবার একটা পাবনা।সব জেনেও আপনি বুবকা হওয়ার পর থেকে আমায় চাকরি ছাড়তে জোর করে গেছেন।কেন ভাবতে পারেননি আপনার ছেলের মতো একটা মেয়েরও স্বাবলম্বী হওয়ার দরকার আজকের দিনে।একটা বাচ্চা মানুষ করতে গেলে একজন স্বামীর স্ত্রীর অর্থনৈতিক সাপোর্ট অনেক মনের জোর বাড়ায় মা।আমি তাও সংসার বাচ্ছা সামলে অতদুরে থেকে যাতায়াত করে এক বছর চেষ্টা করেছিলাম,কিন্তু মানসিক ভাবেও শান্তি পেতামনা যে শারীরিক কষ্টটা ভুলে যাবো।”এবার শক্ত মনের মেয়ে মধুজার গলা ধরে আসে।নিজেকে সামলে আবার বলে,”জানিনা আপনি আমার কথা শুনছেন কিনা,কিন্তু এই কথা গুলো বলে আমার হালকা লাগছে।””শুনছি,বলো”।ওদিক থেকেও আর্দ্র গলায় উত্তর আসে।মধু একটু থমকায়, তারপর বলতে শুরু করে আবার,”আর কি বলবো?শেষ করার আগে তিক্ততা বাড়িয়ে কি লাভ বলুন।শুধু একটাই কথা আপনার ছেলে যদি জানতো চাকরি করা মেয়ে আপনার পছন্দ না তাহলে আমায় পছন্দ করলো কেন? আর সত্যি কি জানেন মা,একদিনের ঝগড়ায় সম্পর্ক ভাঙ্গেনা।আমাদের সম্পর্কে ঘুন অনেকদিন ধরেছিল, তাই এত সহজে এই জায়গায় চলে এলো।কষ্ট হয় বুবকার জন্যে।আমি নিজেও জানিনা বাবা মা আলাদা থাকলে বাচ্ছার ওপর কি প্রভাব পড়ে,তবে যে ঝগড়ার কারণে আমি আপনার ছেলের সংসার ছাড়ি,ওরকম ঝগড়াও একটা বাচ্ছার জন্যে মানসিক ভাবে স্বাস্থ্যকর নয়।আসলে কি বলুন তো আমার সম্পর্ক শুধুই আপনার ছেলের সাথে হয়েছিল,আপনারা কোনোদিনই আমায় ভালোবাসাতেও পারেননি।তাই হয়তো একটা সুতোর বন্ধন এত আলগা ছিল।যাইহোক আপনারা ভালো থাকবেন।এখন ফোন রাখি?”মধুর শেষের ভেঙে পরা গলায় বলা কথা গুলো রত্না দেবীর মনে আদৌ পৌঁছলো কিনা মধু বুঝতেও পারলোনা।শুধু ওদিক থেকে জবাব এলো ,”রাখো”,বলে ফোনটা কেটে গেল।ফোনটা কাটার পর এতদিন পরে মধু হাউহাউ করে কেঁদে ফেললো।আজকের দিনটা আসবে বলে কি কষ্ট করে নিজের সমস্ত জমানো টাকা দিয়ে সুখের বাসা বানাতে গেছিল?হয়তো জিৎ ও এরকমই ভাবে,তাই ওকে ফিরে যাওয়ার জন্যে একবারও বলেনি।যে কথা গুলো জিৎ  বলতে চেয়েছিল সেগুলোই ওর মা বললো।আবার জিৎ নতুন করে কি অপমান করবে শোনার ইচ্ছে হচ্ছিল না,দাঁতে দাঁত চেপে চোখের জল আটকে ফোনটা অফ করে দিল।বুবকা ওর দাদানের কাছে পড়ছে হয়তো,ঘরের আলোটা নিভিয়ে চুপ করে শুয়ে পড়লো মধুজা।কিছুক্ষন পর বন্ধ চোখের বাইরে জলের রেখা গড়িয়ে পড়ল।মনের মধ্যের ঝড় তাতে কমলো তো না,আরো বাড়তে লাগলো।
‘দূর ভালো লাগেনা।ফোনটা অফ করে রেখেছে কেন?আচ্ছা ওর কি কোনো দায়িত্ব নেই ঝামেলা মেটানোর?”রাত 9টার পর থেকে ক্রমাগত মধুর নম্বরে কল করে যাচ্ছে জিৎ,কিন্তু প্রতিবার ধাতব কণ্ঠস্বর জানাচ্ছে নম্বরটা বন্ধ।এক সময় জিৎ এর ধৈর্য্য শেষ হয়ে যায়।রাগ করে ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে একটা সিগারেট ধরিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।মনে পড়ে সন্ধ্যেবেলা মা এর করা ফোনের কথা।মা কিছুতেই মধুকে মানতে পারেনি।ওর ব্যস্ত সময় ফোনে কথা বলতে পারেনি বলে যা তা বললো ওর নামে।যদিও অরি বুঝিয়েছে মাসের এক তারিখ থেকে দশ তারিখ ওদের কিরকম চাপ থাকে,কিন্তু মা শুনলে তো।দূর ভাল্লাগেনা।কষ্ট বেশি হয় বুবকার জন্যে।কাল ছেলেটার কলকাকলিতে ফ্ল্যাটটা গমগম করছিল।আজ আবার সেই গত দেড় মাসের মতো ভূতের বাড়ি হয়ে আছে।সময়ের জন্য রুটি করার মেয়েটাকে বলে কয়ে রাজি করিয়েছে,সকালে এসে এখন রান্না করে দিয়ে যায়।জিৎ আজ একটু আগে ফিরে পড়েছে ।একটা ইম্পরট্যান্ট প্রবলেম সলভ করেছে বলে ম্যানেজার খুশি,ও সেই সুযোগে চলে আসে।কিন্তু এসেও ভালো লাগেনা।তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পরে।সকালে টানা বেলের আওয়াজে যখন ঘুম ভাঙে জিৎ এর ঘড়িতে ৮টা বাজে।’এত সকালে আবার কে এলো?রান্নার দিদি তো ১০টার পর আসে।ঘুম চোখে গিয়া দরজা খুলে প্রচন্ড অবাক হলো জিৎ।এত বড় সারপ্রাইজের জন্যে ও একদমই তৈরি ছিলোনা।
পরের দিনও ফিরতে মধুর ৬টা বেজে গেল।আজকে তার শরীরের থেকেও মন বেশি ক্লান্ত।কাল শাশুড়িমায়ের সাথে কথা বলার পর থেকে মনটা ভেঙে গেছে,আগে কোনোদিন ওনাকে সরাসরি অপমানজনক কিছুই বলেনি,তাই কালকের অপ্রিয় সত্য গুলো বলে থেকে মনটা অশান্ত।বাড়ির দরজায় এসে মধু একটু থমকায়,ভেতর থেকে অনেক গুলো গলার আওয়াজ আসছে,বুবকা খুব হই হই করছে বুঝতে পারছে।মধুর সব গুলো গলাই চেনা লাগে,কিন্তু ওর বাবার বাড়িতে তাঁরা কেন আসবে?!!ভাবতে ভাবতে বাড়ির বেলটা টেপে।দরজা খোলে বুবকা।”দেখো দেখো মাম্মাম,কারা এসেছে?দেখো কি মজা…দাদু ঠাম্মি কখন থেকে তোমার অপেক্ষা করছে।ও মাম্মাম চলো চলো।আমার জন্যে দাদু একটা এয়ার গান এনেছে,দেখবে চলো।চলো না।”বুবকা একভাবে কথা বললেও মধুজার কানে অর্ধেক কথা ঢুকছেনা।ওর নজর সবার দিক ঘুরে আটকে গেছে জিৎ এর ওপর এসে।জিৎ মুখ মাটির দিকে করে চুপ করে বসে,ওর দিকে একবারও তাকাইনি অবধি।কিন্তু মধু বেশ বুঝতে পারছে চোখ বসে গেছে ওর,চোখের কোলে কালি।বরাবর ক্লিন সেভ করা জিৎ এর একগাল ভর্তি দাড়ি।জানেনা কেন এত কিছুর পরও মধুর বুকটা মুজরে ওঠে।হঠাৎ রত্না দেবীর ডাকে ঘোর কাটে ওর,”এস মধু।তোমায় জিজ্ঞেস না করেই তোমার বাপের বাড়ি চলে এলাম”।তারপর সোফা ছেড়ে উঠে এসে উনি বলেন,”তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর কিছু কথা আছে আমার তোমার সঙ্গে।তোমার ঘরে শুধু তোমার সাথেই বললে ভালো হয়”। অবাক মধুজা কিছুক্ষন ওঁর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,”ফ্রেশ হওয়ার দরকার নেই,আপনি আসুন আমার সাথে।”বলে মমতার দিকে তাকিয়ে চায়ের ইশারা করে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে যায়,যদিও মনে ঘুরতে থাকে জিৎ এর শুকনো মুখটা।রত্না দেবী মধুর ঘরে ঢুকে দরজা টা ভেজিয়ে দেয়,তারপর খাটে মধুর পাশে গিয়ে বসে।কিছুক্ষন চুপ করে থেকে অন্য দিকে মুখ করে কথা শুরু করেন,”জানো মধু অরি হওয়ার পর আমি সরকারী উঁচু স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম,শুধু ছেলে মানুষ করবো বলে।বিয়ের আগে পাওয়া চাকরি,তখন অবশ্য এস.এস.সি দিতে হতোনা,তাও লেখা ইন্টারভিউ সব দিয়ে প্যানেলে প্রথম হয়ে পাওয়া চাকরি।”মধুজা অবাক হয়ে তাকায় ওনার দিকে।উনি নিজের মনে বলেই চলেছেন,”আমার শাশুরিমা ক্লাস ফোর পাস,কিন্তু পড়াশোনার ভীষণ ঝোঁক ছিল।আমায় বিয়ের পর চাকরি ছাড়ানোর বদলে উৎসাহ দিতেন।বিয়ের পর আমি এম.এ পাস করি মায়ের উৎসাহে।কিন্তু এমনি কপাল জিৎ যখন ৭মাস মা হঠাৎ করে আমাদের ছেড়ে চলে যান।আমি অথৈ জলে পড়ি, ওইটুকু ছেলে কে দেখার কেউ ছিলোনা।আর তখন আমার শ্বশুরবাড়ি গ্রাম ছিল,বাচ্ছা দেখার আয়াও পাওয়া যেতনা।সব মিলিয়ে তোমার শ্বশুর মশাই এর ইচ্ছায় চাকরিটা ছেড়ে দিই।আফসোস হতো,কিন্তু সত্যি অন্য কোনো উপায় ছিলোনা।আমি তাই চাইনি জিৎ চাকরি করা মেয়ে বিয়ে করুক।মনে হয়েছিল ছেলে পুলে মানুষ করতে অসুবিধা হবে।তার চেয়ে ঘরের বউ ঘরে থাকাই ভালো।আমার মতো কি সে চাকরি ছাড়বে?আসলে আমি আমার শাশুড়িমায়ের মতো সামান্যতমও হতে পারিনি।কাল যখন তুমি বললে,’অর্ধেকদিন না খেয়ে অফিসে গেলে আমি ফিরেও তাকাতাম না’।আমার চোখে ওই দৃশ্যটা ভেসে উঠলো,আমার শাশুরিমা আমায় রোজ ভাত বেড়ে খাইয়ে তবে স্কুলে যেতে দিতেন।বিশ্বাস করো,খুব লজ্জা হলো নিজের ওপর।খুব ছোট লাগলো নিজেকে।ছোটবেলায় মা কে হারিয়েছি ,কিন্তু শাশুড়িমায়ের থেকে মায়ের ভালোবাসা কম পাইনি।কিন্তু আমি নিজে সেটা ভুলে গেলাম কিকরে?কিকরে ভুলে গেলাম তোমার শ্বশুর ওনার সামনে আমায় উঁচু নিচু কথা বললে উনি যাতা বলতেন বাড়ির লক্ষ্মীকে অপমান করার জন্যে।সেখানে আমি….খুব খুব ছোট লাগলো নিজেকে।মা থাকলে কত খারাপ ভাবতো আমাকে।আর সত্যি তো আজকের দিনে হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলা বোকামো।”তারপর তাকিয়ে দেখলেন,”মধু সব হারানো মুখ করে চুপ করে বসে আছে।কোলের উপর রাখা ওর হাত দুটো ধরে বললেন,”এই খারাপ শাশুড়ি মা টাকে শেষ বারের মতো ক্ষমা করে দিতে পারবেনা বৌমা?ফিরে চলো তোমার সাজানো সংসারে।আর বুড়ো বুড়ি দুটো কেও এবার তোমাকেই দেখতে হবে।ওর নির্জন বাড়িতে একা একা দম বন্ধ হয়ে আসে।থাকতে দেবেনা তোমার ছোট্ট ফ্ল্যাট এ?”মধু আর নিজেকে সামলাতে পারেনা।শাশুড়িমায়ের হাত দুটোর মধ্যে মুখ গুঁজে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে।রত্না একটা হাত আলতো করে ছাড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”লক্ষ্মী মা আমার।নিজের সংসার এভাবে ভাঙ্গেনা।ফিরে চল মা।এই বুড়ি মা টার পুরোনো রূপ ভুলে যা।একটা সুযোগ দে আমার শাশুড়িমায়ের শিক্ষার দাম দেওয়ার।ভুলে গিয়েছিলাম আমি।”তারপর আস্তে আস্তে মধুর মুখটা তুলে চোখের জল মুছিয়ে বলে,”কি করবি বল।আমাদের সমাজে মেয়েদেরই ধৈর্য্যের প্রমান দিতে হয়।কিন্তু আমার ছেলে তোকে সত্যি ভালোবাসে।ওকে মানসিক ভাবে দৃঢ় করতে দূরে রেখে রেখে মানুষ করেছি কিন্তু হয়তো কোথাও ওর মধ্যে একাকীত্ব রয়ে গেছে।ওর হাত ছেড়ে দিসনা মা।ফিরে চ।আচ্চা দাঁড়া আমি গিয়ে জিৎ কে পাঠিয়ে দিচ্ছি।তোদের মান অভিমান মিটিয়ে নে।”বলে মধুর মাথায় হাত বুলিয়ে একটু আদর করে উঠে যান।জিৎ মায়ের কথায় একটু সংকোচ করেও আসে মধুজার ঘরের সামনে।এসে দেখে দেখে দরজা ভেজানো।একটু ইতস্তত করে টোকা দেয়।কোনো আওয়াজ আসেনা।এবার দরজাটা সামান্য ঠেলে ভেতরে ঢোকে।দেখে মধু জানলার ধারে দাঁড়িয়ে।সঙ্কোচে এগিয়ে যায়,যেন কতদিনের অর্ধপরিচিতি কারোর কাছে যাচ্ছে।দেড় মাসের ছাড়াছাড়ি এতটা দূরত্ব তৈরি করেছে ভাবতেও অবাক লাগে।মধুজার পিছনে গিয়ে কয়েক মুহূর্তও থেমে আস্তে করে ডাকে,”মধু”।মধুজা ওর দিকে ফেরেওনা,সাড়াও দেয়না।শুধু বুঝতে পারে মধুর পিঠটা কাঁপছে,মধু কাঁদছে।এবার একটা হাত মধুর কাঁধে রেখে আবার ডাকে মধু বলে।চকিতে ছোট মেয়ের মতো মধু ঝাঁপিয়ে পরে অরিজিৎ এর বুকে।দুহাত দিয়ে মধুকে বুকে আগলে নেয় অরি।কাঁদতে দেয়, কিছুটা অভিমান যাতে জল হয়ে বেরিয়ে যায়।আস্তে আস্তে জিৎ বলে,”দোষ দুজনেই করেছি,হয়তো আমার টা একটু বেশি।কিন্তু পুরোটাই অভিমান থেকে।ভুলে যাও সব।চলো নতুন করে আর একবার শুরু করি।ক্ষমা করে দিই একে অপরকে।বুবকার জন্যে শুধু না নিজেদের জন্যেও শুরুটা দরকার।পারছিনা তোমায় ছেড়ে থাকতে।”মধু কিছু না বলে আরো জোরে আঁকড়ে ধরে জিৎ কে।জিৎ ও বুকের মধ্যে মিশিয়ে নেয় তার মধু কে।ফিসফিসিয়ে মধু বলে,”জিৎ এর জন্যে মধুর দরজা সবসময় খোলা।কোনোদিনও নক করার দরকার আর যেন না পরে।”জিৎ মৃদু হেসে মধুকে বুকে মিশিয়ে নিয়ে নিজেও মিশে যেতে চায় ওর সাথে।সম্পর্কের শেষে গিয়ে শুরু হয় নতুন এক সম্পর্কের।শুধু বুবকার মা বাবা হয়ে নয়,ওরা নতুন করে শুরু করে অরিজিৎ মধুজা হয়ে।
সমাপ্ত…..ছবি সংগৃহিত।

You may also like

2 comments

Antara chatterjee September 22, 2021 - 5:38 PM

Apurbo…er ageo pore chhi
👌👌👌

Reply
Tamali October 9, 2021 - 8:22 PM

😊😊😊

Reply

Leave a Comment

error: Content is protected !!