শেষ থেকে শুরু – তৃতীয় ভাগ

by Tamali


“কিরে সৌম্য এভাবে বসে আছিস?টিফিন খাবিনা?চ গ্রাউন্ডে যাই।”বুবকা ওরফে সৌম্যজিৎ গাঙ্গুলী কে ক্লাসরুমে একা বসে থাকতে দেখে ওর প্রিয় বন্ধু আদিত্য বেশ অবাক হয়।এই বয়সটা আসলে দেখতে ছোট মনে হলেও ওদের নিজেদের মন আর চিন্তাশক্তি তৈরি হওয়ার সময়।এতদিন শিশুমন খেলেছে আর নিজেদের জগৎ নিয়ে থেকেছে।কিন্তু এই ৭-৮বছর বয়সে সে শেখে বাইরের জগতের ভালো মন্দ বুঝতে,শেখে চিন্তা করতে।তাই হয়তো ছোটদের বড় বড় ভাবের শুরু হয়।এই বয়সটা মন তৈরির বয়স,কিন্তু নিজেদের প্রকাশ করা আগের মতো সহজ হয়না।শিশুর জেদ, চাহিদা,পছন্দ অপছন্দ সবই থাকে কিন্তু মনের গভীরে চাপা হয়ে।ছোটবেলার বায়না করে আদায় করার প্রবণতা এই সময় কমতে থাকে,কারণ বুঝতে শিখতে শুরু করে একটা শিশু।অনুভূতি তৈরি হয় মনে।

“না রে তুই যা।আমার ভালো লাগছেনা”,আদিত্য সৌম্যর কথা শুনে ওর দিকে এগিয়ে আসে।”কি হয়েছে তোর?কদিন ধরেই চুপচাপ আছিস।বলনা”,আদির কথায় সৌম্য ওর দিকে তাকায়।”আজ টিচারস-প্যারেন্টস মিটিং আছে না,তো মা কে সকালে বললাম।কিন্তু মা আসতে পারবেনা।বাবা কে ফোন করলাম,বাবা ফোন উঠালোনা।মা দাদুকে পাঠাবে বলেছে,কিন্তু ম্যাম বলেছিলাম হয় মা নাহলে বাবা কে আনতে।কিন্তু আমার…”,সৌম্যর কথা এলোমেলো হয়ে যায় ওর চিন্তার মতোই।

“কাকু কোথায়?”আদির হঠাৎ এরকম প্রশ্নে সৌম্য অবাক হয়ে  বলে,”বাবা তো বাড়িতে।কেন রে?”এবার আদি অবাক হয়ে বলে ,”তুই তাহলে ফোন করেছিলাম বললি কেন রে?”সৌম্য মাথা নিচু করে কিছুক্ষন ভাবে,আদি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ওকে কি বলবে কিছু?তারপর ভাবে না থাক কদিন পর তো বাবা মার আড়ি মিটে যাবে,শুধু শুধু….আর তাছাড়া ও শুনেছে দিদুন দাদান কে বলছিল,’এসব কাউকে বলার দরকার নেই।’

“কিরে সৌম্য কি ভাবছিস এত তুই?”শিশুমনের কৌতূহল একটু বেশিই হয়।”আমরা কদিন দিদুনের বাড়ি আছি রে।তোকে বলা হয়নি।”সৌম্য আদিত্যকে ঠান্ডা করে।”আচ্ছা চ প্লে গ্রাউন্ডে যাই।”বলে আদির হাত ধরে দুজনে স্কুলের খেলার মাঠের দিকে যায় টিফিন শেষের ঘন্টা পড়ার কিছুক্ষন আগে।
“মমতা একটা ভালো শার্ট প্যান্ট বের করে দাও।দাদুভাই এর টিচারের সাথে আজ কথা বলতে যাবো যে,মিটিং আছে”,মধুজার বাবা সৌমেনবাবু নিজের স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন।রান্নাঘর থেকে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসে মমতা একটু কিন্তু কিন্তু মুখ করে।তারপর স্বামীকে বলেই ফেলে না বলতে পারা কথাটা,”তোমায় যেতে হবেনা।অরি যাবে বলেছে।আমি ফোন করেছিলাম।”সৌমেনবাবু অবাক চোখে তাকান নিজের স্ত্রীর দিকে।মুখটা একটু বিকৃত করে বলেন,”তুমি ফোন করেছিলে?!!কখন করলে ফোন?”

“একটু আগে যখন তুমি দোকানে গেছিলে।”আর বেশি কথা না বাড়িয়ে রান্নাঘরে ফিরে যাওয়ার আগে হঠাৎ মনে পড়ায় দাঁড়িয়ে স্বামীর দিকে পিছন ঘুরেই আবার বলেন,”অরি আজ বুবকাকে পৌঁছে দিয়ে যাবে।তোমায় ওকে আনতে যেতেও হবেনা”,মমতার কথায় সৌমেনবাবুর মাথায় এমনি আগুন জ্বলছিল।শেষের কথাটায় দাঁত কিড়মিড় করে নিজের রাগটা উগড়ে দেন মমতার ওপর,”তোমার মেয়ে জানলে তোমায় কি বলবে জানো? মধুকে জিজ্ঞেস না করে ওর স্বামীকে তুমি ফোন করতে গেলে কোন আক্কেলে?”মমতা এবার ঘুরে দাঁড়ায়।স্বামীর চোখে চোখ রেখে বলে, “মধুকে জিজ্ঞেস করিনি কারণ অরির সাথে এখনো অবধি আমারও একটা সম্পর্ক আছে।শুধু তাই নয়,বুবকার এখনো অভিভাবক অরিজিৎ।আমি আগেও বলেছি আবার বলছি এটা ওদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার,তুমি ঢুকনা।জানি মেয়ে তোমার প্রাণ,কিন্তু অরিজিৎ কে চিনি দশ বছরের বেশি,আর কাছ থেকে দেখছি সেটাও পাঁচ বছর হয়ে গেল।তাই আমার বিশ্বাস ওদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে,সেখানে আমরা ঢুকলে ব্যাপারটা আরো বিগড়ে যাবে।তাই তুমি….”,কথাটা শেষ করতে পারেননা মমতা।গর্জে ওঠেন সৌমেনবাবু।”কোথায় আমায় ঢুকতে দেখলে?কিন্তু ভুলে গেলে যখন একমাস আগে মেয়েটা এবাড়ি আসে ওর চোখমুখ কি হয়েছিল?ভুলে গেলে ওইদিন আমার ফোন থেকে তোমার আদরের জামাইকে কল করেছিলাম আসতে বলবো বলে ও কল টা ধরেনি।ওর মা অকারনে ফোন করে আমাদের অপমান করেছিল, আমাদের শিক্ষা সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, যেটা আমরা খুকিকেও বলিনি।তারপরও শুধু মেয়ের বাবা মা বলে আত্মসম্মান খুইয়ে ওই ছেলেটা কে ফোন করতে হতো?”

“না আজ আমি মেয়ের মা হয়ে ফোনটা করিনি।করেছি বুবকার দিদুন হয়ে।বলোতো,কি দোষ ওইটুকু একটা দুধের শিশুর?কি দেখছে ও এই বয়সে?ও কান্নাকাটি করেনা,মুখে কিছু বলেনা,একটু চাপা স্বভাবের…কিন্তু আমি ওকে কথা ফোটার আগে থেকে মানুষ করছি।আমি বুঝি ওইটুকু বাচ্ছার মনে কি সাংঘাতিক চাপ পড়ছে।…তোমার মেয়ে কষ্ট পাবে বলে বলিনা,রোজ বলে ‘বলো দিদুন মা বাবার আড়ি থেকে ঠিক ভাব হয়ে যাবে’…”বলতে বলতে মমতার গলা ধরে আসে।সৌমেন বাবুও চুপ করে যান,কি বলবেন তিনি এই কথার।মমতাই আবার বলেন,”আর কথা শোনানোর কথা যদি বলো সেতো আমাদের সমাজের রীতি,ছেলের মা সুযোগ পেলেই মেয়ের বাবা মা কে বলবে।কেন আমার মা বাবা শোনেনি?বিয়ের পরের দিন থেকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেও কোনোদিন তোমার মার মন পাইনি,বাবা মা দেখা করতে এলেই কথায় কথায় আমার নিন্দে করতেন,বাবা মার কিছু না শিখিয়ে শ্বশুর বাড়ি পাঠানো নিয়ে খোঁটা দিতেন।কিন্তু অরি…ও কিন্তু মধুকে এতদিন যতটা পারে আগলে রেখেছিল।ওর মায়েরও মধুকে কথা শোনানোর সাহস হয়নি অরির কারণে।আমি তো জানি মধুর সুবিধের জন্যে ও এক কথায় আমাদের কাছাকাছি ফ্ল্যাট কিনে চলে আসে।অরির সাথে আমাদেরও দশ বছরের সম্পর্ক,সেটা কিন্তু মিথ্যে না”,একটানা কথা গুলো বলে চোখের জল মুছতে মুছতে মমতা রান্নাঘরে চলে যায়।সৌমেনবাবু মুখ গোঁজ করে বিছানায় বসে পড়েন।আসলে বউ এর সাথে হওয়া ঘটনাই নিজের মেয়ের সাথেও হলে অনুভূতি আসে তখন।বুকে বাজে বুকে করে মানুষ করা মেয়ের কষ্ট,যেটা হয়তো কোনোদিন নিজের স্ত্রী আর তার মা বাবাও পেয়েছে সেটা মনে থাকেনা।কিন্তু খুকি শুনলে যদি রাগ করে,ভুল বোঝে ওঁদের,এটাই চিন্তা হয় সৌমেনের।মেয়েটাও যে তার বড্ড চাপা আর অভিমানী।

“দেখুন মিস্টার গাঙ্গুলী আপনার সাথে মিসেস গাঙ্গুলী এলে সব থেকে ভালো হতো।আগেও বলেছি আপনাদের সৌম্যজিৎ বয়সের তুলনায় অনেক পরিণত,কিন্তু খুবই চাপা।গত ২/৩ সপ্তাহ ধরে ওকে খুব অন্যমনস্ক লাগছে।সবচেয়ে অবাক লেগেছে আমার ওর কিছু হোমওয়ার্ক আর ক্লাসওয়ার্ক দেখে,অনেক বেশি সিলি মিসটেক।যেটা সৌম্যজিতের একদমই হতোনা।ক্লাসের বেস্ট ১০জনের মধ্যে ও থাকে, কিন্তু এসব ব্যাপারে ও এক নম্বর।আমার মনে হচ্ছে কিছুদিন ও কোনো মানসিক চাপে আছে।আপনার কোনো আইডিয়া আছে সে ব্যাপারে?”ক্লাস টিচার তনয়া বসুর কথায় মনটা খারাপই হয়ে যায় জিতের।সত্যি বলতে ছেলেকে কতটুকু টাইম ওরা বাবা মা হয়ে দেয়,কিন্তু সত্যি বুবকার মতো লক্ষ্মী ছেলে কটা হয়?ওর তো কোনো দোষ নেই,ওর চারপাশে যে অস্থিরতা তাতে ও অন্যমনস্ক হবে সেটা তো স্বাভাবিক।কিন্তু এ নিয়ে কিই বা বলবে বুবকার টিচারকে,তাই যেটুকু বললে তখনকার মতো সম্মান রক্ষা হয় তাই বললো অরি কিন্তু মনে মধুজার প্রতি তিক্ততা কেই বাড়িয়ে তুললো,”আমি দুঃখিত মিস বাসু মধুজা আসতে না পারার জন্যে।তবে আমি কথা দিচ্ছি সৌম্যজিতের সাথে কথা বলবো।বোঝেন তো বাচ্ছার মন,কোনো কারণে চঞ্চল আছে,আমি ওর দিকে শিওর নজর দেব।আর নেক্সট বার দুজনেই আসব।”

“ওকে মিস্টার গাঙ্গুলী।আসলে আপনারা দুজনেই তো ওয়ার্কিং,হয়তো ওকে একটু সময় দিলেই ঠিক হয়ে যাবে।আর হ্যাঁ এবারের উইন্টার ক্যাম্প হচ্ছে ডিসেম্বরে মুকুট মণিপুরে,সৌম্যজিতের নাম এন্ট্রি করি?”তনয়া বসু জিজ্ঞাসু চোখে তাকান।”এটা কি ম্যান্ডেটরি?কদিনের ট্যুর?”এসব ব্যাপারে মধুজাই সিদ্ধান্ত নেয়।তবে এখনো অবধি ও কোথাও ছেলেকে পাঠায়নি,সেই নিয়ে জিতের সাথে তর্কও হয়েছে।ছেলে স্মার্ট হবেনা বলে জিৎ এইসব ক্যাম্পের পক্ষে এতদিন বলে এসেছে,কিন্তু আজ নিজে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েও অনায়াসে মনের সাপোর্ট পাচ্ছেনা।”না এটা এডিশনাল।বাচ্ছাদের কিছু এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস শেখানো হয়,সেলফ ডিপেন্ডেন্ট হতে সাহায্য করা হয়।আর ট্যুর টা তিনদিনের।”অরিজিৎ ভেবে বলে,”আমি ওর মার সাথে কথা বলে খুব তাড়াতাড়ি আপনাকে জানিয়ে যাবো।”

“ওকে,এখনো সময় কিছুটা আছে।…ওকে, তাহলে আপনার কিছু জানার আছে কি?”তনয়া মিটিং শেষ হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।অরিজিৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”আপাতত কিছু না।থ্যাংক ইউ।”
“বুবকা কোথায় মা?বাবা গেছিল ওর স্কুল মিটিংয়ে?” নিজের কাজ থেকে ফিরে টেবিলে রাখা জলের জাগ থেকে গ্লাসে জল ঢেলে খেতে খেতে মমতাকে প্রশ্ন করে মধুজা। মমতার বুক এতক্ষন এই প্রশ্নের অপেক্ষায় ঢিব ঢিব করছিল।এবার কি বলবেন ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক হয়েই উত্তর দিয়ে ফেলেন,”না তোর বাবা যায়নি।অরি গেছিল,আর বুবকা আজ ওর বাবার কাছে থাকবে বলে ও বাড়ি গেছে।”মধুজা জল খাওয়া থামিয়ে মায়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,”জিৎ জানলো কিকরে মিটিং এর কথা?সকালে বুবকার ফোন তো ধরেনি।আর তুমি বুবকাকে ছেড়ে দিলে?”মধুর দৃষ্টির সামনে মমতা কুঁকড়ে যান।এমনিতেই উনি একটু ভীতু প্রকৃতির মানুষ,তার ওপর বুবকার ব্যাপারে মধু অনেকটাই ইনসিকিওর উনি জানেন…তাই কথা জড়িয়ে যায় মেয়েকে উত্তর দিতে গিয়ে,”না মানে অরিকে আমি ফোন করেছিলাম,কিন্তু কথা ছিল বুবকাকে স্কুল ফেরত ও পৌঁছে দিয়ে যাবে।হঠাৎ দুপুরে বুবকার ছুটির পর ফোন করে জানায় আজ ও ছুটি নিয়েছে,তাই বুবকাকে নিজের কাছে নিয়ে যাচ্ছে।আমি বারণ করছিলাম,কিন্তু ফোনে বুবকা খুব বায়না করলো বাবার কাছে থাকবে বলে।অনেকদিন পর ছেলেটার গলায় খুশি শুনলাম বলে,আর কি….”,আর কি বলবেন বুঝে উঠতে পারেন না।মধুজা আর কিছু না বলে গ্লাসটা নামিয়ে রেখে নিজের ঘরে চলে যায়।কিন্তু মা হয়ে মমতা স্পষ্ট দেখতে পান মেয়ের চোখে সব হারানোর এক অব্যক্ত বেদনা।বুঝতে পারেন মধুর চোখে নিরাপত্তাহীনতার কষ্ট,বুবকাকে হারানোর ভয়।’হে ভগবান,সব ঠিক করে দাও।ছোট বাচ্চাটাকে আর এসব পলিটিক্স এ জড়িও না।ওকে ওর মা বাবার কাছে ফিরিয়ে দাও।ফিরিয়ে দাও আমার মেয়ের মুখের হাসি।’অশান্ত মায়ের মন আশ্রয় খুঁজতে থাকে সর্বশক্তিমান সেই শক্তির কাছে।কিন্তু সেই সর্বশক্তিমান ভগবানও যে কিছু ক্ষেত্রে মানুষের বোধ বুদ্ধির ওপর নির্ভরশীল এটাই মানুষ বোঝেনা।ঠাকুর অবস্থা তৈরি করে দিতে পারে হয়তো কিন্তু কাজে লাগাতে হয় সেই মানুষটা কেই।নিজের ঘরে গিয়ে কিছুক্ষন চুপ করে বিছানায় বসে থাকে মধুজা।ঘরটা আজ বড় ফাঁকা লাগছে,রোজ ও ফিরলে ওর সাথে সাথে বুবকাও এঘরে এসে ঢোকে।বিছানায় লাফ দিয়ে উঠে বসে শুরু করে রোজকার গল্প…সারাদিন কি করেছে,স্কুলে কি হয়েছে,দিদুন কি বলেছে…এসব শুনতে শুনতে চা খায় মধু।আজ যেন শূন্যতা গিলে খেতে আসছে।ওর জীবনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য লোকটা আজ মুখ ফিরিয়ে আছে,সবচেয়ে বড় আশ্রয়টা চলে গেলে কি নিয়েই বা বাঁচবে ও।এতদিন পাড়ায় কানা ঘুষো শুনতো, পাত্তা দিতোনা।কিন্তু আজকের অফিসের ঘটনাটায় ভালোই বুঝতে পেরেছে ওকে নিয়ে ভালোই গসিপ চলছে সর্বত্র।নাহলে ওই মিস্টার দাশগুপ্ত ওভাবে হ্যারাস করতে পারতোনা।লোকটাকে দেখলেই প্রথমদিন থেকে একটা অস্বস্তি আর তার থেকে চাপা রাগ হতো।আজ যখন ফালতু অজুহাত দিয়ে ফোন নম্বর চাইলো মাথা ঠিক রাখতে পারেনি মধু।তার জন্যে যে উনি ‘কনজিউমার হ্যারাসমেন্ট’এর মত অভিযোগ আনবে মধু দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি।ভাগ্গিস ঠিক ওর মাথার ওপরে সিসিটিভি ক্যামেরাটা ছিল তাই বাঁচতে পারলো।কিছু একটা ভেবে ফোনটা হাতে নিলো মধুজা।তারপর শেষ দশ বছরে সবচেয়ে বেশি ডায়েল করা নম্বরটাতে প্রায় দেড় মাস পর রিং করেই ফেললো।কিন্তু ফোন বেজে গেল জিৎ ফোন ধরলোনা।এবার নিজের মোবাইলটা বুকে চেপে এতদিনের চেপে রাখা কান্নাটা বের করে দিলো বুক থেকে।বুবকার সামনে কাঁদতে না পেরে বুকের মধ্যেটায় যেন পাথর চেপে যাচ্ছিল।এই দেড় মাসে প্রতিটা দিন ভেবেছে আজ সেই কাঙ্খিত ফোনটা আসবে,আজ জিৎ নিজে নিতে আসবে…কিন্তু প্রতিদিন রাতে নিরাশ মনে ঘুমিয়েছে।হোয়াটসঅ্যাপেও কোনো মেসেজ অবধি আসেনি।ওকে ছাড়া জিৎ ভালোই আছে এটা মনে ভাবার চেষ্টা করে নিজেকে সবসময় বুঝিয়েছে।তাও সব ঠিক হয়ে যাওয়ার আশা এখনো অবচেতনে হয়তো রয়ে গেছিল,তাই আজ ফোন না ধরায় সব শেষের অশনি সংকেতে বুকটা কেঁপে উঠে।সেই অনিশ্চয়তা এতোদিনকার জমে থাকা কষ্ট বের করে দেয় চোখের জল করে।হঠাৎ খাটে রাখা মোবাইলটা গোঁ গোঁ করে ভাইব্রেট হতে থাকে,তাকিয়ে দেখে ফোনের স্কিনে জ্বল জ্বল করছে নামটা,’জিৎ’।তাড়াতাড়ি করে চোখ মুছে হাত বাড়িয়ে ফোন টা নেয়।রিসিভ করে গলা পরিষ্কার করে বলে,”হ্যালো”।কিন্তু জিৎ না,কথা বলে ওঠে বুবকা।

You may also like

Leave a Comment

error: Content is protected !!